আন্তর্জাতিক

পরিযায়ী শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ফেরাতে নতুন প্রকল্পের ঘোষণা মমতার

দিল্লিসহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার ও হেনস্তার অভিযোগ আগেই উঠেছে। এবার সেই সব পরিযায়ী শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে এনে তাদের সুযোগ সুবিধা দিতে ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। সোমবার রাজ্যের ক্যাবিনেট বৈঠকে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

পরে রাজ্য সরকারের সচিবালয় থেকে সংবাদ সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক যারা বিভিন্ন রাজ্যের কাজ করেন এবং সেখানে অত্যাচারের শিকার হয়ে যারা অসহায় অবস্থায় বাংলায় ফিরে আসছেন, তাদের ব্যাপারে রাজ্য সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে এনে তাদের পুনর্বাসনের জন্য আমরা একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সেটি হচ্ছে শ্রমশ্রী প্রকল্প।”

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “বাংলা ভাষা ও বাঙালি পরিচয়ের উপরে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। কেউ বাংলায় কথা বললেই তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কখনও বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করে দেওয়া হচ্ছে, কখনও কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে, কখনো আবার থানায় নিয়ে গিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে। বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য এখনো পর্যন্ত ২২ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা হেনস্থার শিকার হয়েছে।” 

এ সময় তিনি বলেন, “নতুন এই ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের কাজ হলো ওই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনা এবং নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করা। যারা ফিরে আসবেন তাদের এককালীন ভ্রমণ সহায়তাসহ পাঁচ হাজার রুপি দেব। তাকে খাদ্যসাথী কার্ড ও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়া হবে। সেই সমস্ত শ্রমিকদের যদি নিজের বাড়ি না থাকে তবে কমিউনিটি সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।” 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজ্যে ফিরে আসার পর আগামী এক বছর নতুন কাজে যুক্ত না হওয়া অব্দি মাসিক ৫ হাজার রুপি করে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে রাজ্যের শ্রম দপ্তরকে নোডাল ডিপার্টমেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে এবং গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ।” 

ফিরে আসা শ্রমিকদের দক্ষতা বিচার করে উৎকর্ষ বাংলার অধীনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্কিল ট্রেনিং দিয়ে বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করা হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। 

এছাড়া কর্মশ্রী প্রকল্পের অধীনে এই সমস্ত শ্রমিকদের জব কার্ড দেওয়া হবে, এছাড়াও স্বনির্ভর প্রকল্পের অধীনে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী উপজাতি সহ অন্য অনগ্রসর শ্রেণীর ঋণ দেওয়া হবে। এছাড়াও ওই পরিযায়ী শ্রমিকের সন্তানরা কন্যাশ্রী শিক্ষাশ্রী ঐক্যশ্রী, মেধাশ্রী সহ অন্য সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলা থেকে ২২ লাখ ৪০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক যারা ভারতবর্ষের অন্য রাজ্যে বা বিদেশে কাজ করছে তারা সকলেই এই ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।”

পরিযায়ী শ্রমিক সম্পর্কিত যে পোর্টাল রয়েছে সেই পোর্টালের নাম নথিভুক্ত করারও আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি ‘শ্রমশ্রী’ নামে একটি নতুন পোর্টাল খোলার ঘোষণা দেন। রাজ্যে ফিরে আসার শ্রমিকদের সেই পোর্টালে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নাম নথিভুক্ত করার পর তাকে একটি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। সেখানে একটি নির্দিষ্ট ক্রমিক নাম্বার থাকবে। সেই অনুযায়ী ওই সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন।