নেপালে জেন-জির বিক্ষোভ-সহিংসতার মুখে কে পি শর্মা অলি সরকারের পতনের পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশটির সড়কে টহল দিচ্ছে সামরিক বাহিনীর সাঁজোয়া যান। সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকতে এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সামরিক চেকপয়েন্ট বসিয়ে যানবাহনের কাগজপত্র ও পরিচয় যাচাই করছে সেনারা। খবর কাঠমান্ডু পোস্টের।
জেন-জি বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাদের অহিংস আন্দোলনকে কিছু সুযোগসন্ধানী অনুপ্রবেশকারী সহিংসতায় রূপ দিয়েছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বাসনেটও একই কথা বলেছেন। তিনি জানান, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
সহিংসতা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত যে কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নেপালজুড়ে কারফিউ বহাল থাকবে।
নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দিনের বিক্ষোভ-সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি।
গত সোমবার ‘হিমালয়কন্যা’ নেপালে বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারি বাহিনী গুলি চালালে নজিরবিহীন সহিংসতা শুরু হয়। এর জেরে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তাকে সামরিক হেলিকপ্টারে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি কোথায় আছেন, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন আছে। প্রথম খবর রটে যে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে কাতারে আশ্রয় নিয়েছেন শর্মা অলি। কিন্তু পরে স্থানীয় সাংবাদিক প্রজ্জল অলি জানান, নেপালেই অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী। নেপাল স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রজ্জল অলি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়েননি। এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় তাকে ব্যারাকে রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এই মুহূর্তে অনেক মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা আশ্রয় নিয়েছেন।
মঙ্গলবার মারধরের শিকার হন অলি সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি। আগুন দেওয়া হয় পার্লামেন্ট, রাজনীতিকদের বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনায়।
এদিকে, দেশের এই নেতৃত্বশূন্য পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নেপালে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগডেল বিক্ষোভকারী জেন-জি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ছাত্রনেতারা তাদের দাবির একটি নতুন তালিকা তৈরি করছেন বলে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে আপাতত দুজনের নাম সামনে এসেছে। তাদের মধ্যে কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ, অন্যজন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। সুশীলা ছিলেন নেপালের প্রথম নারী বিচারপতি। ইন্ডিয়া টুডে জানায়, জেন-জি আন্দোলনকারীরা সুশীলাকে তাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে পছন্দ করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংকট সমাধানের আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রধান মনে করা হচ্ছে।