গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিসরে গত দুই দিনের মতো আজ বুধবারও পরোক্ষ বৈঠক বসছে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধি দল। আজকের আলোচনায় যোগ দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার।
আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ব্রিটিশ সংবামাধ্যম বিবিসিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার পরোক্ষ আলোচনার দ্বিতীয় দিন বাস্তব ফলাফল ছাড়াই বৈঠক শেষ হওয়ার পর, মার্কিন প্রতিনিধি দল আজ বুধবার দুই পক্ষের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনায় বসবেন।
গতকাল ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকীর দিনে ইসরায়েলিরা ইতিবাচক সুরে কথা বলেছেন। তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শান্তি আলোচনার অবস্থা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ মঙ্গলবার একটি পোস্টে নেতানিয়াহু বলেন, “ইসরায়েল তার যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ চালিয়ে যাবে: অপহৃত সব জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা, হামাস শাসনব্যবস্থার নির্মূল করা এবং গাজা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি হবে না এই প্রতিশ্রুতি।”
আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র বিবিসি জানান, উইটকফ এবং কুশনার স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা দিয়েছেন। তারা আজ বুধবার মিশরে পৌঁছাবেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একজন কর্মকর্তা জানান, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি, যাকে একজন গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে, তিনিও আলোচনায় যোগ দেবেন।
আলোচনায় আল থানির যোগ দেওয়া লক্ষ্য হবে- গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া। তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধানও আজকের আলোচনায় যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একজন ঊর্ধ্বতন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফার পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়েছিল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায়।
তিনি জানান, গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার এবং চুক্তির প্রথম পর্যায়ের পরে ইসরায়েল যাতে আবার যুদ্ধ শুরু না করে তা নিশ্চিত করার জন্য হামাস যে নিশ্চয়তা চায় তা নিয়ে মতবিরোধের মধ্যে বৈঠকটি বাস্তব ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আলোচনা কঠিন ছিল এবং এখনো কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। তবে তিনি এটাও জানান যে, মধ্যস্থতাকারীরা উভয় পক্ষের মধ্যে মতের ব্যবধান কমাতে ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছেন।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “সবাই যাতে চুক্তি মেনে চলে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।”
এর আগে, একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছিলেন যে, আলোচনায় পাঁচটি মূল বিষয়ের উপর তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, বন্দী বিনিময়, গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার, মানবিক সাহায্য সরবরাহের ব্যবস্থা এবং যুদ্ধোত্তর অঞ্চলের শাসনব্যবস্থা।
হামাসের আলোচক দলের প্রধান খলিল আল-হাইয়া, যাকে গত মাসে হত্যার উদ্দেশ্যে ইসরায়েল কাতারে হামলা চালিয়েছিল, তিনি মিশরীয় বার্তা সংস্থা আল কাহেরা নিউজ টিভিকে বলেন, গোষ্ঠীটি ‘গুরুতর ও দায়িত্বশীল আলোচনা’ করতে এসেছে।
হাইয়া আরো বলেন, হামাস একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত, কিন্তু ট্রাম্প এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ‘প্রকৃত গ্যারান্টি’ প্রয়োজন যে, যুদ্ধ শেষ হবে এবং পুনরায় শুরু হবে না।
ইসরায়েলে একাধিক জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজা যুদ্ধের অবসান চায়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, তখন থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৮ হাজার শিশুও রয়েছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে নিহতের এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।
চলতি বছরের আগস্ট মাসে জাতিসংঘ-সমর্থিত সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) সতর্ক করে জানায়, গাজা জুড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে, ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিকে ‘বিকৃত ও মিথ্যাচার" বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।