আন্তর্জাতিক

প্রেমিকার দেখা পেতে বোমা ছুঁড়ে গ্রেপ্তার প্রেমিক

রাগ করে কথা বন্ধ করেছিল প্রেমিকা। রাগ ভাঙিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে, একটু কথা বলতে ইউটিউব থেকে বোমা তৈরির কৌশল শিখেছিল প্রেমিক। বোমা ফাটার শব্দে যদি প্রেমিকা বেরিয়ে আসে... এই আশায়। এক্সপার্টের মতো বানিয়েও ফেলে বোমা। কিন্তু বোমা ফাটার তীব্র সেই শব্দে আতঙ্কিত হয়ে প্রেমিক ও তার বন্ধুরা পালিয়ে যায় নিজেরাই। 

গত ২৮ অক্টোবর, ছট পূজার রাতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি এক আবাসিক এলাকা গভীর রাতে বোমা বিস্ফোরণের তীব্র আওয়াজে কেঁপে উঠে। বোমা মারার সেই ঘটনা দুষ্কৃতী আক্রমণ ভেবে লেগেছিল রাজনৈতিক রং, তৈরি হয়েছিল আতঙ্ক। হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম। স্বাভাবিকভাবেই দুষ্কৃতীদের ধরতে চাপে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তদন্তে প্রেমিকার রাগ ভাঙানোর তথ্যে তদন্ত যেন মোড় নিয়েছে আশ্চর্যের এক প্রেমের গল্পে। 

পুলিশ জানায়, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড মালিরবাগান খামারডাঙা এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা ছোঁড়া হয়। বাড়িটির দেয়ালে লাগে বোমা, জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।

ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ বাড়িটির বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু কোনো সূত্র পাওয়া যায় না। এরপর এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি সিসিটিভির ফুটেজে একটি বাইকের ছবি দেখে তার সন্ধান শুরু করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মালিরবাগান এলাকায় যেখানে বোমাবাজি হয়েছিল সেখানে এক তরুণীর সঙ্গে চাঁপদানীর স্থানীয় যুবক সাগর মালিকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কে অবনতি হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে প্রেমিক প্রেমিকার দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছিল না। এর মধ্যেই প্রেমিক বন্ধুদের মারফত জানতে পারে প্রেমিকা অন্য এক যুবকের সঙ্গে মেলামেশা করছে। এদিকে সাগরের ফোন ধরা বন্ধ করে দেয় তরুণী।

কী করে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করা যায় সেটাই ভাবতে থাকে প্রেমিক। এরপরেই বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা করার বুদ্ধি বের করে সাগর। ইউটিউব দেখে বেশ কয়েক ধরনের পটকার উপদান দিয়ে বোমা বানায়। সেটি ফাটানোর পরিকল্পনা করা হয় প্রেমিকার বাড়ির পাশে। 

বোমা ফাটার আওয়াজে তরুণী প্রেমিকা যদি বেরিয়ে আসে তাহলে তার সঙ্গে কথা বলবে- এই উদ্দেশ্য নিয়ে ছট পূজার রাতে চার বন্ধু পৌঁছে যায় মালিরবাগান এলাকায়। বোমা ছোঁড়ে একটি বাড়ির দেওয়ালে। এতটাই জোরে শব্দ হয় যে তারা নিজেরাই ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে পুলিশ ওই তরুণীর সঙ্গে সাগরের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তার খোঁজ শুরু করে। পাশাপাশি বাইকের নম্বর দেখে খোঁজ শুরু করে। সাগর এবং তার বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, তারা ঘটনার পর থেকে আর বাড়িতে থাকছিল না। ঘটনার পর চার বন্ধুই কল্যাণীতে পালিয়ে গিয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গতকাল শুক্রবার পুলিশ তাদেরকে ব্যারাকপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, আটক সাগর মালিক, প্রিন্স যাদব, প্রণীত পাল, আয়ুস যাদব, চারজনেরই বয়স ১৮-২০ বছর।ইতিমধ্যেই তাদের শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হয়েছে। আরো জিজ্ঞাসাবাদ জন্য পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়েছে।