আন্তর্জাতিক

‘বয়কট বাংলাদেশ’ পোস্টার শিলিগুড়ির হোটেল গাড়ি ট্যাক্সিতে

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের শহর শিলিগুড়ির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও পেট্রোল পাম্পে সোমবার ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ বয়কটের পোস্টার। কে বা কারা এই পোস্টার লাগিয়েছিল সেসময় জানা যায়নি। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যা থেকে প্রকাশ্যেই শিলিগুড়ির স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী যুবকেরা বিভিন্ন হোটেল, লজ, ট্রাভেল এজেন্সি থেকে শুরু করে গাড়ি ও ট্যাক্সিতে লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ বয়কটের পোস্টার। 

ভারতের চিকেন নেক খ্যাত পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের শহর শিলিগুড়ি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যকে একসঙ্গে জুড়েছে। ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারতের এই ভূখণ্ড বাংলাদেশসহ নেপাল ও ভুটানের  সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। পর্যটন ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের তাগিদে প্রতিদিন কয়েক হাজার বাংলাদেষি শিলিগুড়িতে অবস্থান করে। সম্প্রতি এই সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেলেও কলকাতার পরে ভারতে সবথেকে বেশি বাংলাদেশির পদচারণা হয় শিলিগুড়ি অঞ্চলে।  

সম্প্রতি এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহসহ বাংলাদেশের একাধিক নেতৃত্বের এই শিলিগুড়ির করিডোর বিচ্ছিন্ন করে ভারত থেকে সেভেন সিস্টারকে আলাদা করে দেওয়ার হুমকি ও তার পরপরেই ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু দাসের হত্যাকাণ্ড রীতিমতো প্রভাব ফেলেছে গোটা ভারতে। শিলিগুড়িতে এমন ঘটনার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। শিলিগুড়ির বাংলাদেশ ভিসা সেন্টার আক্রান্ত হয়েছে। এখন শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশে বয়কটেরও ডাক উঠেছে। 

শিলিগুড়ির পর্যটন ব্যবসায়ী শরদ মাহাতো বলেন “দিপু দাসকে হত্যার পর সেই ছবি তুলতে তুলতে লোকজনের উল্লাস দেখা গিয়েছে তা আমাদের ব্যথিত করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখছি সেখানকার সাধারণ মানুষ বলছে ‘আমরা ভারতকে পয়সা দেই।’ আমরা তাই আমাদের শিলিগুড়িবাসী ও ব্যবসায়ীদের বলছি তারা বয়কট বাংলাদেশের এই পোস্টার তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সামনে লাগিয়ে রাখুক। বাংলাদেশি পণ্য বয়কট করুক।”

অবশ্য এমন ঘটনাকে ভয়ংকর বলছেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী।

তিনি বলেন, “খুব ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। দুটো দেশের ভূগোল এক, ভাষা এক, সংস্কৃতি এক, সব খাবার এক, সবকিছুতেই আমাদের একে অপরকে প্রয়োজন। দুটো দেশের মধ্যে আমাদের চার হাজারের বেশি সীমান্ত। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আজ যে বাংলাদেশের পরিচিতি উত্তপ্ত হচ্ছে বা আজকে যে বাংলাদেশের সরকার পাকিস্তানের আইএসআইয়ের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে তাদের একটাই লক্ষ্য ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বৈরীতা সৃষ্ট করা। এতে পাকিস্তান দূর থেকে হাসছে। পাকিস্তান, চীনের এটাই লক্ষ্য। ভারতবর্ষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক। আজকে  বাংলাদেশের ঘটনায় ভারতবর্ষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে তার ছোট ছোট নমুনা কেউ বলছে বাংলাদেশের মালপত্র বয়কট কর, কেউ বলছে বাংলাদেশি দেখলে গাড়িতে তুলো না। এরপর ওপারে একই জিনিস হবে। ওপারে যে হিন্দুরা আছে তাদের সঙ্গে একই জিনিস হবে। ভারত সরকার ঘোষণা করে দাও সব সীমান্ত খুলে দিচ্ছি, সব হিন্দু চলে এসো-তাও তো বলছে না। অথচ এখানে বকুনিবাজি চলছে। এসব না করে প্রয়োজনে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা হোক। যাতে সেখানকার সংখ্যালঘু মানুষ, স্বাধীনচেতা মানুষ, হিন্দু মুসলমান সবাই যেন স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে।”