আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর

দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় পর দেশে ফিরলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘদিন তিনি লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে তার এই প্রত্যাবর্তনকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে তুলে ধরেছে।

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি তারেক রহমানের  জন্য বড় ধরনের সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। দলটির দাবি, এতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের উপস্থিতি হতে পারে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন শেখ হাসিনার অপসারণের পর বিএনপি রাজনৈতিকভাবে নতুন গতি ফিরে পেয়েছে। 

আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দলের প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে তাকে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশের ক্ষমতা মূলত খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মধ্যে পালাবদল হয়েছে। তবে আসন্ন নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না পারায় বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা জোরালো।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স শিরোনাম করেছে- ‘নির্বাচনের আগে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমান’। তার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিএনপির অন্তত ৫০ লাখ সমর্থককে একত্র করার লক্ষ্যকে রয়টার্স শক্তি প্রদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও বিচ্ছিন্ন সহিংসতার আশঙ্কার কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের ডিসেম্বরের এক জরিপে বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি সংসদে সবচেয়ে বেশি আসন পেতে পারে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। দলটি নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতার হুমকি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ভোটের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি সংবাদ শিরোনাম করেছে, ‘১৭ বছর নির্বাসনের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদের শীর্ষ প্রার্থী তারেক রহমান দেশে ফিরেছেন’। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬০ বছর বয়সী প্রভাবশালী এই নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে। বিএনপি নতুন বছরে জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরবে বলে আশা করছে । 

পাকিস্তানের জিও নিউজ সংবাদ শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরেছেন’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমান ১৭ বছর নির্বাসিত থাকার পর গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে দেশে ফিরলেন। এতে বলা হয়, তারেক রহমান ২০০৮ সালে রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে যান।

পাকিস্তানের আরেক প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ডন শিরোনাম করেছে, ‘নির্বাসন শেষে ১৭ বছর পর দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকারী’। আসন্ন নির্বাচনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, তারেক রহমান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে। খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় আসন্ন নির্বাচনে তারেক রহমানই তার দলের প্রধান মুখ ।

ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ভারতের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ভারতের জন্য জামায়াতে ইসলামী উদ্বেগের বিষয়।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতের আরেক প্রভাবশালী গণমাধ্যম এনডিটিভি। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান প্রায় ১৭ বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনের পর দেশে ফিরেছেন।

সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতীকী ঘটনা হিসেবে দেখছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এই প্রত্যাবর্তন দেশটির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ ও ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা মনে করছে।