আন্তর্জাতিক

যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসছেন জেলেনস্কি

যুদ্ধ বন্ধের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফের বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি আগামীকাল রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। 

আজ শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

জেলেনস্কি বলেন, এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তৈরি একটি শান্তি পরিকল্পনা এবং মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টির পৃথক প্রস্তাবগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে তিনি আশা করছেন। তবে রাশিয়ার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, এই পরিকল্পনাটি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনাধীন পরিকল্পনার চেয়ে ‘আমূল ভিন্ন’।

মস্কো আলোচনায় ‘ধীর কিন্তু স্থিতিশীল অগ্রগতির’ কথা বললেও, ইউক্রেনের পূর্ব দনবাস অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে জেলেনস্কির প্রস্তাব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। জেলেনস্কি শর্ত দিয়েছেন যে, রাশিয়া সেনা সরিয়ে নিলে ইউক্রেনও সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নেবে।

শনিবার রাতে কিয়েভে নতুন করে আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটস্কো জানান, ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী এই হামলা প্রতিহত করছে। তবে সর্বশেষ এই হামলায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করে। বর্তমানে মস্কো দোনেৎস্ক অঞ্চলের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং প্রতিবেশী লুহানস্কের ৯৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এই অঞ্চলগুলো সম্মিলিতভাবে দনবাস নামে পরিচিত।

ইউক্রেন একটি শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি চেয়েছে। জেলেনস্কি প্রস্তাব করেছেন যে, দনবাসের যেসব এলাকা রাশিয়া জোরপূর্বক দখল করতে পারেনি, সেখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত ‘মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গঠন করা যেতে পারে।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, “২০ দফার এই শান্তি পরিকল্পনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ১০০ শতাংশ সম্পন্ন নিশ্চিত করতে কাজ করছি।” 

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “আমরা একটি দিনও নষ্ট করছি না। আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের বিষয়ে একমত হয়েছি- খুব শিগগির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। নতুন বছরের আগেই অনেক কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।”

তবে শুক্রবার একই দিনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমি অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত তার (জেলেনস্কি) কাছে কিছুই নেই।” ট্রাম্প আরো বলেন, “আমি মনে করি তার সাথে এবং ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সব ঠিকঠাকই হবে।” তিনি শিগগির রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও কথা বলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

ক্রেমলিন দূত কিরিল দিমিত্রিভ গত সপ্তাহে ফ্লোরিডায় এক বৈঠকের পর পুতিনের ঊর্ধ্বতন সহযোগীরা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে আরো আলোচনা করেছেন। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও অভিযোগ করেছেন যে, ইউক্রেন মার্কিন পরিকল্পনা নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে।

জেলেনস্কির আসন্ন ফ্লোরিডা সফরের বিস্তারিত প্রকাশ্যে আসার আসার কিছুক্ষণ পরেই ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রুশ বিমান হামলায় দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-জেলেনস্কির প্রথম বৈঠকে বাগ্‌বিতণ্ডা হওয়ার পর থেকে জেলেনস্কি এই বছর বেশ কয়েকবার ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন। অক্টোবরে হোয়াইট হাউজে তাদের সর্বশেষ অনেক বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।

জেলেনস্কি বলেন, আলোচনার সর্বশেষ দফা যুদ্ধের অবসান কীভাবে করা যায় সে সম্পর্কে ‘নতুন ধারণা’ তৈরি করেছে। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকটিকে ‘সত্যিই ভালো কথোপকথন’ হিসাবে বর্ণনা করেন।

হোয়াইট হাউজ পূর্ব ইউক্রেনে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে কোনো পক্ষই সেনা মোতায়েন করবে না। এর ফলে বিতর্কিত ভূখণ্ডের মালিকানার প্রশ্নটি এড়িয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে। জেলেনস্কি গত বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ইঙ্গিত দেন যে, ইউক্রেন যদি সম্মুখ সমর রেখা থেকে ৪০ কিলোমিটার পিছিয়ে আসে, তবে রাশিয়াকেও দনবাসের শিল্পাঞ্চল থেকে একইভাবে পিছিয়ে যেতে হবে।

জেলেনস্কি শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের বলেন, আগামীকাল রবিবার ফ্লোরিডার বৈঠকে মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং একটি পৃথক অর্থনৈতিক চুক্তি সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হবে।

সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রকাশিত নতুন শান্তিচুক্তির পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে ন্যাটোর ‘আর্টিকেল ৫’-এর আদলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার অধীনে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ৮ লাখ সদস্যের থাকবে, যদিও ক্রেমলিন এটি কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিল।

পুতিন দীর্ঘদিন থেকেই সতর্ক করে বলছেন যে, ইউক্রেনীয় সেনাদের পুরো দনবাস থেকে সরে যেতে হবে, অন্যথায় রাশিয়া তা দখল করে নেবে। যুদ্ধের অবসান কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে যেকোনো আপস প্রত্যাখ্যান করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।