আন্তর্জাতিক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাহিনীকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ ইয়েমেনের

ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট কাউন্সিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সব বাহিনীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে ইয়েমেনে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমিরাতের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি বাতিল করারও ঘোষণা করেছে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেনের প্রেসিডেন্সিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিল তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের সব সীমান্ত ক্রসিংয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে ৭২ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা ও জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

ইয়েমেনের প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি এক বিবৃতিতে বলেন, “সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করা হলো।” একই সাথে তার পক্ষ থেকে জারি করা একটি পৃথক ডিক্রিতে ৯০ দিনের জরুরি অবস্থা এবং ৭২ ঘণ্টার জন্য আকাশ, সমুদ্র ও স্থলপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এই বিবৃতিটি এমন এক সময়ে এলো যখন সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট দাবি করেছে যে, তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ বন্দর থেকে আসা জাহাজ থেকে ইয়েমেনের মুকাল্লা বন্দরে খালাস করা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও যুদ্ধযান ধ্বংস করেছে। এই সরঞ্জামগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)-এর জন্য আনা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে।

সৌদি প্রেস এজেন্সি কর্তৃক প্রকাশিত এক বক্তব্যে জোট বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল তুর্কি আল-মালিকি জানান, গত ২৭-২৮ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দুটি জাহাজ জোটের যৌথ বাহিনীর কমান্ড থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি না নিয়েই মুকাল্লা বন্দরে প্রবেশ করে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত এসটিসি, যারা মূলত সাবেক স্বাধীন দক্ষিণ ইয়েমেন রাষ্ট্রকে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশের বিশাল অংশ দখলে নিয়েছে এবং সরকারি বাহিনী ও তাদের মিত্রদের বিতাড়িত করেছে।

গত ডিসেম্বরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর এসটিসি হাজরামাউত ও আল-মাহরা প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিলে উত্তেজনা আরো তীব্র হয়। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের প্রধান আল-আলিমি এক টেলিভিশন ভাষণে এসটিসি-কে দখলকৃত এলাকা হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন এবং তাদের এই অগ্রসর হওয়াকে ‘অগ্রহণযোগ্য বিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করেন।

এদিকে সৌদি আরব বলেছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেনা প্রত্যাহার এবং যেকোনো পক্ষকে সামরিক বা আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার যে দাবি ইয়েমেন জানিয়েছে, তাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইতিবাচক সাড়া দেওয়া উচিত।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এসটিসি বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের সৌদি আরবের দক্ষিণ সীমান্তের কাছে সামরিক অভিযান চালাতে বাধ্য করছে, যা খুবই দুঃখজনক।

উল্লেখ্য, ইয়েমেনের বর্তমান প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল বিভিন্ন গোষ্ঠীর একটি সমন্বিত কাঠামো যেখানে এসটিসি-র সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ইরান-পন্থি হুতিদের বিরুদ্ধে অভিন্ন অবস্থানের কারণে তারা মূলত ঐক্যবদ্ধ ছিল। হুতিরা ২০১৪ সালে ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে সরকারি বাহিনীকে বিতাড়িত করে এবং উত্তরের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।