আফ্রিকার দেশ মালি ও বুরকিনা ফাসো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা ঘোষণা করেছে। দেশ দুটির নাগরিকদের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে পৃথক দুটি বিবৃতিতে মালি এবং বুরকিনা ফাসো কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের এই নতুন পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো- যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকরা যে ধরনের নিয়মের সম্মুখীন হন, মার্কিন নাগরিকদের তাদের দেশে আসার ক্ষেত্রেও ঠিক একই নিয়মের মুখোমুখি করা।
মালির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয় জানায়, মালিয়ান নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে মার্কিন কর্তৃপক্ষ যেসব শর্ত ও প্রয়োজনীয়তা আরোপ করেছে, মালিতে মার্কিন নাগরিকদেরও ঠিক একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। মন্ত্রণালয় আরো যোগ করেছে, ‘পারস্পরিক সমতার ভিত্তিতে এবং অবিলম্বে কার্যকর করার লক্ষ্যে’ এই পরিবর্তনগুলো আনা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বুরকিনা ফাসো জানায়, তারা মার্কিন নাগরিকদের ওপর ‘সমতুল্য ভিসা ব্যবস্থা’ প্রয়োগ করছে। দেশটি জোর দিয়ে বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিনিময়ের নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গত ১৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনসহ আরো ৭টি দেশের নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘পূর্ণ’ বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দেন। এর কয়েক সপ্তাহ পরেই এই পাল্টা পদক্ষেপ এলো। মার্কিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নতুন যুক্ত হওয়া দেশগুলোর সবই আরব অথবা আফ্রিকার দেশ, যার মধ্যে বুরকিনা ফাসো এবং মালিও রয়েছে।
সেই সময় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লক্ষ্য’ পূরণের জন্য এই পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে।
বুরকিনা ফাসোর নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো বুরকিনা ফাসো জুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির অনীহার কথা উল্লেখ করা হয়।
মালির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ঘোষণায় বলা হয়, স্টেট ডিপার্টমেন্ট মালির সরকার এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সারা দেশে সংঘাতের প্রমাণ পেয়েছে এবং দেশটির কিছু এলাকায় ‘সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো অবাধে তৎপরতা চালাচ্ছে’।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের অধীনে এখন পর্যন্ত মোট ১৯টি দেশ এবং ফিলিস্তিন এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্সির সময়ও এই ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া নাইজারের পাশাপাশি মালি এবং বুরকিনা ফাসোও সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে। এই তিনটি দেশ বর্তমানে ‘অ্যালায়েন্স অব সাহেল স্টেটস’ নামক একটি নতুন জোটের মাধ্যমে কাজ করছে।
এই তিনটি দেশই বর্তমানে সামরিক নেতাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং সেখানে অবস্থানরত ফরাসি ও মার্কিন সেনাদের বহিষ্কার করেছে।
মালি ইতিমধ্যেই রাশিয়ান বাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছে, যার মধ্যে ওয়াগনার ভাড়াটে গ্রুপের প্রায় দেড় হাজার সেনা এবং ক্রেমলিন-নিয়ন্ত্রিত আধাসামরিক বাহিনী ‘আফ্রিকা কর্পস’-এর প্রায় এক হাজার যোদ্ধা রয়েছে।
সম্প্রতি মালির বামাকোতে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে এই তিন দেশ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি যৌথ সামরিক ব্যাটালিয়ন চালুর ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং আল-কায়েদা ও আইসিল (আইএসআইএস)-এর সঙ্গে যুক্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান হামলার মুখে দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হিমশিম খাচ্ছে।