আন্তর্জাতিক

ইরানে বিক্ষোভকারীদেরকে ইসরায়েলের সমর্থন, কঠোর হুঁশিয়ারি তেহরানের

অর্থনৈতিক সংকটের তীব্র প্রভাবে ইরানে দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে গণবিক্ষোভ। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ডের।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ইরানের প্রসিকিউটর জেনারেল মোহাম্মদ মোভাহেদি-আজাদ সতর্ক করে বলেছেন, দেশজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক বিক্ষোভগুলো যৌক্তিক, তবে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে ‘কঠোরভাবে’ দমন করা হবে। 

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “জীবনযাত্রার মান নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সামাজিক বাস্তবতারই অংশ এবং এটি বোধগম্য।”

তিনি আরো যোগ করেন, “অর্থনৈতিক বিক্ষোভকে পুঁজি করে অরাজকতা সৃষ্টি করা, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা বা বাইরে থেকে পরিকল্পিত কোনো নীল নকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হলে- অনিবার্যভাবেই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ, আনুপাতিক এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সরাসরি ইরানিদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার মুখে মোসাদ দাবি করেছে যে, তারা ‘মাঠ পর্যায়ে’ বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিচ্ছে।

ইসরায়েলের আর্মি রেডিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজ বুধবার মোসাদের ফার্সি ভাষার ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে ইরানের বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে করে একটি পোস্টে বলা হয়, “সবাই মিলে রাস্তায় নেমে আসুন। সময় হয়ে গেছে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।” 

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার পোস্টে আরো উল্লেখ করা হয়, “শুধু দূর থেকে বা কথার মাধ্যমে নয়, আমরা মাঠ পর্যায়েও আপনাদের সঙ্গে আছি।”

গত রবিবার তেহরানের ব্যবসায়ীরা ইরানের ভেঙে পড়া অর্থনীতির প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন, তা এখন অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে এবং শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দিচ্ছেন। মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বিশ্ব মুদ্রার বিপরীতে ইরানি রিয়ালের ব্যাপক দরপতন ঘটেছে, যার ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামনি নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প ইরানকে সতর্ক করে বলেন, ইরান যদি তাদের পারমাণবিক বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পুনরায় শুরু করে, তাহলে দেশটিতে আবারো হামলা চালানো হবে।

চলতি বছরের শুরুতে ইরান ও ইসরায়েল ১২ দিনের একটি যুদ্ধে জড়িয়েছিল। ইসরায়েল তখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং আবাসিক এলাকায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে দাবি করেছিল যে, তারা ইরানের পারমাণবিক গবেষণা ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে ধ্বংস করে দিতে চায়।

জবাবে ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালায়। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সংক্ষিপ্ত হামলা চালায়, যার পরপরই যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।

ইরান ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। তেহরান দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এবং বিজ্ঞানীদের হত্যার পেছনে জড়িত।

ইরানে এর আগে ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। সে সময় কঠোর হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনীর মৃত্যুর পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। সেই বিক্ষোভে কয়েক শ’ মানুষ নিহত হন, ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।