সাক্ষাৎকার

‘ভোক্তা অধিকার আইন জানলেই অনিয়ম হ্রাস পাবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : ‘দেশের প্রায় ৯৯ ভাগ মানুষই ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে অবগত নন। ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে জানা ও তা প্রয়োগের মাধ্যমেই একমাত্র অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভেজাল থেকে মুক্তি পেতে পারে মানুষ।’ এমনটাই মনে করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমীন।রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন মত ব্যক্ত করেন চট্টগ্রামের আলোচিত এ ম্যাজিস্ট্রেট।রুহুল আমীন বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৭৬ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অনিয়ম-ভেজাল-দুর্নীতির কারণে কোনো প্রকার ক্ষতির শিকার হয়ে জেলা প্রশাসক কিংবা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত দরখাস্ত দেন। তবে জেলা প্রশাসক কিংবা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সম্মুখে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডেকে অভিযোগের প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা করবেন। এবং জরিমানাকৃত অর্থের ২৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক প্রদান করবেন।’তিনি বলেন, ‘এ আইন সম্পর্কে যদি মানুষ অবগত থাকেন ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তবে সমাজে অনিয়ম-ভেজাল-দুর্নীতি থাকবে না বললেই চলে। মানুষ যত সচেতন হবে, ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে অবগত হবে এবং তা প্রয়োগ করবে, সমাজ থেকে তত তাড়াতাড়ি অনিয়ম-ভেজাল-দুর্নীতি দূর হবে।’১৯৮৫ সালের ২১ এপ্রিল মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন রুহুল আমীন। মাদারীপুরের আলহাজ আমীন উদ্দিন হাইস্কুল থেকে ২০০০ সালে এসএসসি ও সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন তিনি। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হলেও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ৩০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১২ সালের ৩ জুন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যোগদান করেন। তিন দিন পর ৬ জুন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর পদে যোগদান করেন তিনি।গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আলোচনায় আসেন এই ম্যাজিস্ট্রেট। গত বছরের জুলাই থেকে নকল ওষুধের দোকান, ফাস্ট ফুড, বেকারি ও বিভিন্ন নামিদামি রেস্তোরাঁয় সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেন তিনি। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৪টি অভিযান পরিচালনা করেছেন। এসব অভিযানে ২১৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৬ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়াও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২১৪টি মামলা, ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা ও তিনজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।অভিযান পরিচালনা করতে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সত্য কথা বলতে কি আমি তেমন একটা বাঁধার সম্মুখীন হইনি। এর কারণ হিসেবে আমি মনে করি গণমাধ্যমের জোড়ালো ভূমিকা।’এ কারণে তিনি চট্টগ্রামের গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদও জানান।আলোচিত এ ম্যাজিস্ট্রেটের সম্প্রতি বদলি হয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  ‘চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে আমার আন্তরিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে থাকার আগ্রহ আছে কিন্তু সরকার আমাকে যেখানে পাঠানো দরকার মনে করে নিয়োগ দেবে আমি সেখানেই যেতে প্রস্তুত।’কেন এমন পেশায় আসা? এ প্রশ্নে ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমীন বলেন, ‘ছোটবেলায় বোর্ড পরীক্ষায় কেন্দ্রে যখন ম্যাজিস্ট্রেট আসতেন চারদিকে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হতো। তখন থেকে এ পেশা আমাকে আকৃষ্ট করে। আর এ পেশায় সাধারণ মানুষকে সরাসরি সেবা দেওয়া যায়। মূলত এ কারণেই এ পেশায় আসা।’ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রুহুল আমীন বলেন, ‘চট্টগ্রামের গণমাধ্যম কর্মীরা আমাকে প্রায় সময় বলেন মোবাইল কোর্ট কি জিনিস এটা সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত করাতে পেরেছি। ‘ভূমি অফিস’ মানুষের কাছে অনেক কঠিন ও জটিলতাপূর্ণ শব্দ। আমার ইচ্ছা ভূমি অফিসকে মানুষের কাছে সহজভাবে তুলে ধরা, যেন মানুষ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন। আর কিছু লিফলেট ছাপাব যেখানে ভূমি অফিসের সব তথ্য থাকবে। এর ফলে মানুষ সবকিছু জানবে এবং দুর্নীতি-হয়রানি থেকেও মুক্তি পাবে।’ 

 

 রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২১ এপ্রিল ২০১৬/রেজাউল/মুশফিক/রুহুল