সাক্ষাৎকার

‘আমারও স্বপ্ন ছিল কমপক্ষে একশ টেস্ট খেলে অবসরে যাব’

সূর্যটা তখন হেলে পড়ছিল পশ্চিম কোণে। লাক্কাতুরা চা-বাগানের কোলে বিশ্রাম নিতে যাচ্ছিল সূর্য মামা। ডুবন্ত সূর্যের লাল আভায় রাঙিন ছিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পড়ন্ত বিকেলে স্টেডিয়াম চক্কর দিচ্ছিলেন ৩৩ বছর বয়সি এক ক্রিকেটার! খুব পরিচিত এক মুখ। তার ব্যাটে রান এলেই এক সময় হাসত বাংলাদেশ, গর্জে উঠত পদ্মা-যমুনা! চিতার মতো ক্ষীপ্র দৌড়, ‍উড়ন্ত পাখির মতো ফিল্ডিংয়ে সবার নজর কেড়েছিলেন খুব অল্পদিনেই। কিন্তু খুব অল্পতেই শেষ তার ক্যারিয়ার। ফর্মহীনতা, নতুনের জয়গানে যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সূচক ঊর্ধ্বগামী, হঠাৎ তখন হারিয়ে গেলেন। বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের দ্বাদশ খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। আগামীকাল বাংলাদেশ খেলবে শততম টেস্ট। সেই সময়ের একমাত্র ক্রিকেটার তিনি যিনি আজও ২২ গজের ক্রিজে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন। জাতীয় ক্রিকেট লিগ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের আজও প্রিয় মুখ। বলছিলাম বাংলাদেশের হয়ে ২৪ টেস্ট ও ৪৩ ওয়ানডে খেলা রাজিন সালেহর কথা। ২০০৮ সালে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটই রাজিনের একমাত্র ভরসা। সিলেটের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট লিগ এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ক্লাব জার্সিতে মাঠে নামেন ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটে প্রায় ১৮ বছরেরও বেশি সময় দেওয়া রাজিন সালেহ রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসান-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিসিএল চলাকালীন সময়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রাজিন সালেহর নেওয়া সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হচ্ছে আজ। প্রশ্ন : বাংলাদেশ একশ’তম টেস্ট খেলতে যাচ্ছে। কেমন লাগছে একজন টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে? রাজিন সালেহ : এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। আমরা শুরু থেকে যে স্বপ্ন দেখছিলাম সেই স্বপ্ন পূরণের পথে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কি থাকতে পারে। সত্যিই একজন টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। আরও ভালো লাগত যদি আমি এ টেস্ট খেলতে পারতাম। প্রশ্ন : এ জায়গায়টায় একটু পরেই আসছি। ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাই। আপনি তো বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের স্কোয়াডে ছিলেন? সেই ২০০০ সালের কথা কি মনে আছে? রাজিন সালেহ : হ্যাঁ, মনে থাকবে না কেন। যতবার বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের কথা স্মরণ হবে ততবারই আমাদের নাম আসবে। কত উৎফুল্ল ছিলাম আমরা। টেস্ট খেলব ভারতের সঙ্গে। চারদিকে আনন্দ, আমাদের নিয়ে মাতামাতি। যেদিন খেলা হল সেদিন মনে হল সত্যিই আমরা অনেক ভাগ্যবান। প্রশ্ন : শচীন টেন্ডুলকারের ক্যাচ নিয়েছিলেন শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে। সেটা কি আপনার ক্যারিয়ারের ভালো একটি স্মৃতি? রাজিন সালেহ :  স্কোয়াডে যখন সুযোগ পাই তখন তো আমি মহাখুশি। সাংবাদিকরা তখন জিজ্ঞেস করেছিল আমাকে, ‘সুযোগ পেলে আমার লক্ষ্য কি থাকবে?’ আমি বলেছিলাম, ‘প্রথম টেস্ট হাফ-সেঞ্চুরি যেন আমার হয়, প্রথম টেস্ট ফিল্ডিংটাও যেন আমার কাছে আসে। আবার ভালো একটা ব্যাটসম্যানেরও ক্যাচ যেন আমি ধরি।’ আমি তো দ্বাদশ ক্রিকেটার ছিলাম। তাতেই আমি খুশি। ফিল্ডিং করতে গিয়ে ধরলাম শচীন টেন্ডুলকারের ক্যাচ! শচীন টেন্ডুলকার তো অনেক বড় মাপের খেলোয়াড়। ওই সময়ে উনার ক্যাচ ধরার আবেগটা বোঝানো যাবে না। মনে হয়েছিল ফিল্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে অনেক বড় কিছু অর্জন করে ফেলেছি। প্রশ্ন : এবার ওই প্রশ্নটা করি। অভিষেক টেস্টের রাজসাক্ষী আপনি। এখনও দিব্যি খেলে যাচ্ছেন। ফিটও আছেন। মাত্রই মাঠটা (সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম) চারবার চক্কর দিলেন। একশ’তম টেস্ট খেলতে পারলে নিশ্চয়ই ভালো লাগত? রাজিন সালেহ : (গলা ভারী, মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিল না, চোখ ছলছল করছিল ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসায়) যেহেতু আমি টেস্ট খেলোয়াড়, টেস্ট খেলতেও পছন্দ করি। যদি খেলার সুযোগ হত তাহলে অবশ্যই ভালো লাগত। প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার, একটা সময় খেলা শেষ করার। আমারও স্বপ্ন ছিল কমপক্ষে এক‘শ টেস্ট খেলে অবসরে যাব। ঘটনা চক্রে যদি এমন হত বাংলাদেশের হয়ে একশতম টেস্ট খেলছি, এরপর খেলা ছাড়ছি তাহলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেত। ক্রিকেট জীবন তো বটেই আমার ব্যক্তিজীবনেরও সবথেকে বড় পাওয়া থাকত। প্রশ্ন : বাংলাদেশের হয়ে আপনি এখন পর্যন্ত ২৪ টেস্ট খেলেছিলেন, একটিও সেঞ্চুরি নেই। কোনো আক্ষেপ কি বয়ে বেড়াচ্ছেন? রাজিন সালেহ : অবশ্যই আক্ষেপ আছে। সবাই আমাকে চেনে টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে। কিন্তু টেস্টে আমার সেঞ্চুরি নেই। ওয়ানডেতে আছে। এটা আমার বড় আক্ষেপ। আসলে আক্ষেপ ছিল। এখন নেই। এখন বাংলাদেশ দল অনেক ভালো হয়ে গেছে। বড় জায়গায় চলে গেছে। দুঃখ তো থাকবেই কিন্তু ওদের খেলতে দেখে খুব ভালো লাগে। প্রশ্ন : ভালো শুরুর পর সব সময় আপনি আউট হয়েছেন। মানে সেট হয়ে আউট হয়েছেন। ৪৬ ইনিংসের আটটিতেই ৪০ এর ঘরে ঘরে আউট হয়েছেন। ২০ থেকে ৪০ এর ঘরে আউট হয়েছে ১০ বার। ওগুলো যদি বড় হত তাহলে তো একশও হয়ে যেত। আসলে তখন কি টেকনিকে ঘাটতি ছিল, না আমাদের ব্যাটসম্যানদের টেম্পারমেন্টে সমস্যা ছিল? রাজিন সালেহ : টেম্পারমেন্টের কথা আমি বলব না। দেখুন আমার সময়ে সিনিয়ার ক্রিকেটারদের পর আমি বেশি বেশি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি। বেশি রান করেছি, বেশি বেশি বল খেলেছি, বেশি সেঞ্চুরিও ছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কি হত সেটা আসলে বুঝতে পারতাম না। হয়ত ৪০ এর ঘরে এসে নার্ভাস হয়ে যেতাম। এজন্য আউট হয়ে যেতাম। তবে আমাদের টেকনিকে কোনো ঝামেলা ছিল না। প্রশ্ন : কাকতলীয়ভাবে যদি এখন হঠ্যাৎ জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যেতেন তাহলে নিজেকে কিভাবে তৈরী করতেন? রাজিন সালেহ : দেশের জন্য খেলা অনেক বড় কিছু। আপনি যেখানেই খেলেন, যত বড় জায়গায় খেলেন কিংবা যত বড় টুর্নামেন্টে খেলেন না কেন দেশের হয়ে খেলা পৃথিবীর সবথেকে বড় পাওয়া। কাকতলীয়ভাবে যদি জাতীয় দলে সুযোগ পেতাম তাহলে হয়ত একশতম টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির পরিকল্পনা করতাম। এরপর অবসরে যেতাম। প্রশ্ন : বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ে আপনার অবদান অনেক। প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা ৮৯, দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনিংয়ে নেমে ২৬, ফিল্ডিংয়েও ক্যাচ নিয়েছেন। বাউন্ডারিতে রান বাঁচিয়েছিলেন... রাজিন সালেহ : বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের কথা যদি কেউ তোলে তাহলে অবশ্যই আমার নাম তুলবে। এটা স্মরণীয় একটি ব্যাপার। হয়ত আমার টেস্ট সেঞ্চুরি নেই কিংবা এক’শ টেস্ট খেলতে পারিনি। কিন্তু প্রথম টেস্ট জয়ের অবদান আমাকে অনেক আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেয়। প্রশ্ন : হাবিবুল বাশার সুমনের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে আপনার ১১৯ রানের একটা জুটিও ছিল। ওই সময়ে এত বড় জুটি সচরাচর হত না। কিন্তু আপনাদের জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়েছিল। কি পরিকল্পনা করেছিলেন ‍দুজন মনে আছে? রাজিন সালেহ : হ্যাঁ আমাদের জুটিটা বড় হয়েছিল। আমরা আমাদের সাধ্যমত খেলার চেষ্টা করেছি। ওই জুটির কারণে আমরা বড় রান পেয়েছি। আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম যতটা সম্ভব উইকেটে টিকে থাকতে। প্রশ্ন : পরের ম্যাচেও তো ব্যাট হাতে আপনি লড়েছিলেন। অনেকেই বলে আপনার হাফ-সেঞ্চুরি না হলে তো সিরিজ বাঁচানো যেত না... রাজিন সালেহ: ওই সময়ে টেস্ট সিরিজ জেতা আমাদের জন্য স্বপ্ন ছিল, কঠিন ছিল। জিম্বাবুয়ে দলে তখন অনেক বেটার ক্রিকেটার খেলছিল। হিথ স্ট্রিক খেলছিলেন, তাইবু ছিলেন। যদিও আমরা ভালো দল ছিলাম। ওই সময়ে টেস্ট সিরিজ জেতা এবং এ জয়ের পিছনে আমার কিছু অবদান আছে সেটা নিঃসন্দেহে গর্ব করার মত বিষয়। প্রশ্ন : আচ্ছা একটা বিষয় বলুন তো। ওই সময় এত তুখোড় ফিল্ডিং কিভাবে শিখেছিলেন? বাউন্ডারিতে বল গেলেই দৌড়ে, ঝাঁপিয়ে রান বাঁচাতেন... রাজিন সালেহ : তখন টিভিতে বড় বড় খেলোয়াড়দের খেলা দেখতাম। জন্টি রোডসের ফিল্ডিং দেখতাম। তখন অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডাররা খুব ভালো ফিল্ডিং করত। আমি তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। ফিট থাকলে এদের মত করে পারব সেই বিশ্বাস ছিল। আর আমি এগুলো ব্যক্তিগতভাবেও অনুশীলন করেছি। আগে তো স্লাইডিং কিংবা ডাইভিংয়ের টেকনিকগুলো জানতাম না। তবে আমাদের স্থানীয় কোচ সরোয়ার ইমরান, দীপু রায় চৌধুরী ফিল্ডিংয়ের জন্য যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। কঠোর পরিশ্রম করতাম এই আর কি। একটা জিনিস আমার মধ্যে ছিল, ‘মাঠের মধ্যে যেখানেই বল যাক কিংবা পাঁচ-ছয় হাত দূর দিয়ে বল যাক, মনে হত ডাইভ দিলে বল কাভার করতে পারব।’ কখনো পারতাম কখনো পারতাম না। প্রশ্ন : ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টে ২৩৫ বলে করেছিলেন ৬০ রান। পাঁচ ঘন্টার উপরে ব্যাটিং করেছিলেন। এতটা ধৈর্য্ কোথায় পেয়েছিলেন তখন? রাজিন সালেহ : আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে এতটা ধৈর্য্ আয়ত্ব করেছি। তখন জাতীয় লিগ অনেকের জন্য সহজ ছিল। কিন্তু আমার জন্য ছিল পেশাদার জীবন। জাতীয় ক্রিকেট লিগ খেলে অনূর্ধ্ব-১৬ দলে ঢুকেছি। আগে তো টেস্ট ক্রিকেট কি সেটা কেউ বুঝাতে পারত না। মনে হত যে, মারার বল ডিফেন্স করা মানেই টেস্ট। আমার এখনও মনে আছে খুলনার বিপক্ষে পৌনে দুইশ কিংবা দেড়শ বল খেলে ২২ রান করেছিলাম। ওইটা খুব আলোচনা হয়েছিল যে আমি টেস্টের মত খেলতে পেরেছি। সময় কাটাতে পেরেছি। এরকম করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমি আমার টেম্পারমেন্ট গ্রো করছি। এরপর আস্তে আস্তে রান করা শুরু করলাম। ধরে ধরে একশ করা শুরু করলাম। আর তখন তো উইকেট এতটা সহজ ছিল না। ভাঙা উইকেট ছিল বেশিরভাগ সময়। স্পিন অনেক টার্ন করত, ডিফেন্স করতেও কষ্ট হত। এভাবেই টেম্পারমেন্ট চলে আসে। প্রশ্ন : শোয়েব আক্তারকে উইকেট দিবেন না এমন কোনো পণ করে রেখেছিলে নাকি? ও তো আপনাকে অনেক শর্ট বল করেছিল? সেগুলো কিভাবে রুখে দিয়েছিলেন ওই বয়সে? রাজিন সালেহ : শোয়েব আক্তার তখন আমাদের বিপক্ষে খেলবে সেটা তো ভাবতেই ভালো লাগছিল। আমি শোয়েব আক্তারের বল খেলব সেটা একটা স্বপ্ন ছিল। আমার এখনও মনে আছে শোয়েব আক্তার যে বলটি আমাকে প্রথমে করেছিল, ইয়র্কার মেরেছিল লেগ স্ট্যাম্পের উপরে। আপিল করছিল এলবিডাব্লিউর জন্য কিন্তু আম্পায়ার দেননি। সত্যি কথা বলতে ওই বলটি আমি দেখিনি। অনেক জোরে বল করছিল। ওই সময়ে তো ওরা আবার বল ‘ডক্টরিং’ করত। বল অনেক রিভার্স সুইং করত। তারপর আমার সিনিয়ার ক্রিকেটাররা বলেছিল তুই সাহস করে দেখ, পারবি। পরের বল যখন ডিফেন্স করলাম তখন মনে হল আসলে ওর বল কিছুই না আসলে। উনি আসলে বাউন্স গায়ের উপরে মেরে খুব ভয় দেখাত। আমি ওর বাউন্স বলগুলোর অপেক্ষা করতাম। সামনের বলগুলো ব্যাটের কাছেই দিত। রান করা যেত। ওকে কি করতে হবে এটা বোঝার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে একদিন দিন শেষে ওনার এক বল আমার হাতে লাগছিল। অনেক দিন আমার ব্যথা ছিল। হাতে রক্ত জমাট হয়ে কালো হয়ে ছিল। পা কালো হয়ে গিয়েছিল একটা বলে। শরীরের উপরে বল নিতাম কিন্তু উইকেট দিব না সেটা চিন্তা করেই রেখেছিলাম। প্রশ্ন : বাংলাদেশকে তো নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগও পেয়েছিলেন। ২০০৪ সালে আপনার নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর আর সেই সুযোগটি পাননি... রাজিন সালেহ : আসলে অধিনায়কত্ব করব এমন কোনো চিন্তা কখনই আমার মধ্যে ছিল না। অনেকেরই স্বপ্ন থাকে কিন্তু আমার সেটা ছিল না। বাংলাদেশ দলে খেলব, ভালো খেলব সেই স্বপ্নই আমার মধ্যে ছিল। ভালো খেলব, ভালো করে অবসরে যাব সেটাই চিন্তা ছিল। প্রশ্ন : ২০০৮ সালে যখন বাদ পড়লেন তখন বাংলাদেশ দলে নতুন প্রতিনিধিরা চলে এল। এজন্যই কি বাদ পড়েছেন নাকি নিজের ফর্মহীনতার কারণে? রাজিন সালেহ : আমি বলব না যে নিজের ফর্মের কারণে বাদ পড়েছি। আমি যখন বাংলাদেশ দল থেকে বাদ পড়ি তখন পর্যন্ত আমার টেস্ট অ্যাভারেজ সবথেকে ভালো। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে নিয়ে গিয়ে আমাকে তখন খেলার সুযোগ দেয়নি। কোচ ওই সময় সিনিয়ার ক্রিকেটারদের ততটা পছন্দ করতেন না। তরুণ ক্রিকেটারদের পছন্দ করতেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তখনও আমার টেস্ট খেলার যোগ্যতা ছিল। প্রশ্ন :  আপনি কি মনে করেন আরও বিশ্বাস রাখা উচিত ছিল আপনার উপর? রাজিন সালেহ : অবশ্যই কোচ যদি আমাকে একটু বুস্টআপ করত তাহলে এখনও আমি জাতীয় দলের হয়ে খেলা চালিয়ে যেতে পারতাম। এখনও যদি ফিট থাকি তাহলে ওই সময় কেন থাকব না। যদি একটু অনুপ্রেরণা পেতাম তাহলে হয়ত এক’শ টেস্টও খেলতে পারতাম। প্রশ্ন : এজন্য কি কাউকে দোষারোপ করবেন? যেমন প্রধান নির্বাচক… রাজিন সালেহ : না কাউকে দোষারোপ করব না। ফারুক আহমেদ ভাইকে আমি ধন্যবাদ জানাব আমাকে জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়ার জন্য। আমার খেলা, আমার ব্যাটিং উনার ভালো লেগেছে বলে উনি আমাকে জাতীয় দলে নিয়েছিলেন। প্রশ্ন : তুষার ইমরান কিংবা অলোক কাপালিরা তো বিসিএল খেলছে। আপনি বসে আছেন খারাপ লাগছে না? রাজিন সালেহ : প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমার জোনে যারা খারাপ করছে তারাও সুযোগ পাচ্ছে কিন্তু জাতীয় ক্রিকেট লিগে আমি ভালো করার পরও আমাকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এজন্যই দুঃখ লাগছে। আমি এখনও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার জন্য ফিট। কেন আমাকে নেওয়া হয় না সেই উত্তর আমার কাছে নেই। প্রশ্ন : জাতীয় দলে অনেক দিন ধরে নেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকেও বাদ পড়ে যাচ্ছেন। ক্যারিয়ারটা এভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়? রাজিন সালেহ : না। আমি এখনও খেলব। আমি যতদিন পর্যন্ত ফিট আছি ততদিন পর্যন্ত খেলব। প্রশ্ন :  গত বছরের আগের জাতীয় লিগ আপনার ভালো গিয়েছিল। প্রিমিয়ার লিগেও ভালো করেছেন। কিন্তু বিসিএলের আগে জাতীয় ক্রিকেট লিগে তো আপনার পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। ৬ ম্যাচে মাত্র ২৬০ রান রাজিন সালেহ : জাতীয় লিগ ভালো না গেলেও প্রিমিয়ার লিগ ভালো গিয়েছে। ইনশাআল্লাহ আসছে প্রিমিয়ার লিগেও ভালো করব। প্রশ্ন : ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথাও মাথায় রাখে নির্বাচক প্যানেল। এজন্যই কি খেলতে পারছেন না? রাজিন সালেহ : ভবিষ্যতের চিন্তা অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু ভবিষ্যত ক্রিকেটাররা যারা খেলবে তারা তো খেলা শিখবে সিনিয়ার ক্রিকেটারদের কাছ থেকেই। অভিজ্ঞতা অর্জন করলেই তো তারা ভালো ক্রিকেটার হবে। আমার ব্যক্তিগত মত,‘ভবিষ্যতের চিন্তা করতে গিয়ে অতীতের ক্রিকেটারদের বাদ দেওয়া মোটেও উচিত নয়।’ প্রশ্ন :  ঠিক এ মুহূর্তে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার ভাবনাটা এখন কী? রাজিন সালেহ : ওই যে আগেই বললাম আমি খেলব। তবে বোর্ড যদি মনে করে খেলা ছাড়া অন্য কিছুতে যেমন কোচিং লেভেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আমাকে জরুরি। তাহলে অবশ্যই আমি বোর্ডের সঙ্গে থাকব। প্রশ্ন : এখন তো খেলা নেই। সময় কাটাচ্ছেন কীভাবে? রাজিন সালেহ : ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরু হবে এপ্রিলে। প্রায় দেড় মাস ধরেই নিজেকে নতুন করে তৈরী করছি। প্রস্তুতি নিচ্ছি এই আর কি। রাজিন সালেহর টুকিটাকি ক্যারিয়ারের সব থেকে ভালো স্মৃতি: প্রথম টেস্ট জয় ক্যারিয়ারের সব থেকে বড় আক্ষেপ: যখন টেস্ট খেলার মত উপযোগী ছিলাম কেন তখন টেস্ট দলে জায়গা দেওয়া হয়নি বাংলাদেশের প্রিয় অধিনায়ক: নাঈমুর রহমান দূর্জয় বাংলাদেশের প্রিয় ব্যাটসম্যান: মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বাংলাদেশের প্রিয় বোলার: মাশরাফি বিন মুর্তজা যাদের বিপক্ষে খেলেছেন তাদের মধ্যে প্রিয় প্রতিপক্ষ: পাকিস্তান যাদের বিপক্ষে খেলেছেন তাদের মধ্যে প্রিয় বোলার: মুত্তিয়া ‍মুরালিধরন কাকে খেলতে সবথেকে বেশি কষ্ট হয়েছে: মুত্তিয়া ‍মুরালিধরন রাইজিংবিডি/কলম্বো,শ্রীলঙ্কা/১৪ মার্চ ২০১৭/ইয়াসিন/আমিনুল