সাক্ষাৎকার

লাক্স সুন্দরী থেকে ব্যারিস্টার

মেহেদী হাসান ডালিম : উপমা বিশ্বাস, ২০০৭ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেরা দশে স্থান পান। অর্জন করেন ৬ষ্ঠ স্থান। কিন্তু মিডিয়া জগতের রঙিন হাতছানি উপেক্ষা করে বার এট ল (ব্যারিস্টারি) পড়তে লন্ডনে যান। কোন সিনেমা বা গল্পে নয়, এখন বাস্তব জীবনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্ন মামলায় আইনি লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন ২৯ বছরের তরুণী ব্যারিস্টার উপমা বিশ্বাস। পাশাপাশি বিজয় টিভিতে নিয়মিত সংবাদ পাঠ করেন তিনি।বিয়ে করেছেন তরুণ ব্যারিস্টার ইলিন ইমন সাহাকে। শৈশব-কৈশোর, লাক্স চ্যানেল আই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া, ব্যারিস্টারি পড়া, বিয়ে, আইন পেশায় থাকাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন উপমা বিশ্বাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম। রাইজিংবিডি:  আপনার শৈশব কৈশোর সম্পর্কে বলুন ? উপমা বিশ্বাস: গ্রামের বাড়ি বরিশাল। জন্ম ১৯৮৮ সালে রাজধানীর মিরপুর।শৈশব-কৈশোর মিরপুরেই কেটেছে। মোহাম্মদপুরের গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ও-লেভেল পড়া শেষ করি। পরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে এ লেভেল পড়ার সময় সিদ্ধান্ত নেই ব্যারিস্টারি পড়ার। এ লেভেল শেষ করে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের আন্ডারে ২০০৮ সালে এলএলবিতে অনার্স সম্পন্ন করি।

ব্যারিস্টার উপমা বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলছেন রাইজিংবিডির প্রতিবেদক

রাইজিংবিডি: ব্যারিস্টার হওয়ার আগ্রহটা কোথায় পেলেন ? উপমা বিশ্বাস: আমার অনেক অপশন ওপেন ছিল। প্রথমে ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম। আমার মায়ের আগ্রহের কারণেই ব্যারিস্টার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এছাড়া দেখলাম আমাদের খ্রিস্টান কমিউনিটির মধ্যে ডাক্তার অনেকেই আছে কিন্তু কোন ব্যারিস্টার নেই। এখন আমাদের কমিউনিটির একমাত্র নারী ব্যারিস্টার আমি। এটা গর্বের বিষয়। এছাড়া মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ও নারীদেরকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার ইচ্ছা আমার সবসময়ই ছিল। আর এটা আইন পেশাতেই সম্ভব। এসব কারণেই ব্যারিস্টারি পড়ার সিদ্ধান্ত নেই। রাইজিংবিডি:  লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় আপনি অংশ নিয়েছিলেন। এটার ফলাফল কি ছিল ? উপমা বিশ্বাস: ২০০৭ সাল। আমি তখন এলএলবি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। তখন লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতার এড দেয়। মায়ের আগ্রহে  লাক্স-চ্যানেল সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। আমি ছোটবেলা থেকেই নাচ গান করতাম। প্রতিযোগিতার প্রত্যেকটা ধাপ পেরিয়ে অর্জন করি ৬ষ্ঠ স্থান। এই প্রতিযোগিতায় বিদ্যা সিনহা মিম প্রথম, আলভী দ্বিতীয় হয়েছিলেন, আম্রবিন ৭ম হয়েছিলেন। রাইজিংবিডি: লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের বিশেষ কোন স্মৃতি মনে পড়ে? উপমা বিশ্বাস: এই প্রতিযোগিতার প্রত্যেকটা নিয়ম মেনে চলার কারণে বিচারকদের কাছে, অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের কাছে অনেক ভালবাসা ও স্নেহ পেয়েছি। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অনেক বন্ধুও পেয়েছি যা কখনও ভুলব না। আরেকটি কথা, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পর আমার কনফিডেন্সের লেভেলটা অনেক বেড়েছে। মনে হয়েছে যে কোন কাজ আমি পারবো। রাইজিংবিডি: লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় টপ টেনে স্থান পাওয়ার পর কোন নাটক সিনেমায় অফার পেয়েছিলেন? উপমা বিশ্বাস: লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় টপ টেনে স্থান পাওয়ার পর ক্যানভাসসহ কয়েকটি পত্রিকায় লাক্সের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছি। মুন্নু সিরামিক্সে আমব্রিনের সঙ্গে বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। এছাড়া বুটিক হাউজ, ফ্যাশন হাউজের কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও মডেল হয়েছি। অনেক সিনেমা-নাটকের অফার পেয়েছি।

ব্যারিস্টার উপমা বিশ্বাস

রাইজিংবিডি: আপনি মিডিয়া জগতের রঙিন হাতছানি উপেক্ষা করে কেন ব্যারিস্টারি পড়তে গেলেন? উপমা বিশ্বাস: আমাকে অনেকেই বলেছে ব্যারিস্টারি পড়ে তুমি কত টাকা ইনকাম করবা। এর থেকে অভিনয় শুরু করো। দেশের একজন প্রখ্যাত একজন অভিনেতাও আমাকে বলেছিলেন তোমার ব্যারিস্টারি পড়ার দরকার নেই। তুমি ব্যারিস্টারি করে কত টাকা ইনকাম করবা। এর থেকে নায়িকা হলে বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবা। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে চলচ্চিত্রের নায়িকা হওয়ার চেয়ে ব্যারিস্টার হওয়াটা অনেক বেশি সন্মানজনক। তাই আমি আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য মিডিয়ার জগতের রঙিন হাতছানি উপেক্ষা করে ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে বার এট ল করতে লন্ডন চলে যাই। রাইজিংবিডি: আপনার স্বামীও একজন ব্যারিস্টার। আপনাদের দুজনের পরিচয় ও বিয়ে সম্পর্কে কিছু বলুন। উপমা বিশ্বাস: সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমরা দুইজনই লন্ডন কলেজ অব ল’ এর দুটি ভিন্ন ক্যাম্পাসে ব্যারিস্টারি পড়েছি। কিন্তু কেউ কাউকে চিনতাম না। তবে আমি জানতাম বাংলাদেশের একজন খ্রিস্টান ছেলে এখানে ব্যারিস্টারি পড়ছেন। তবে কখনও পরিচয় হয়নি। আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই পরিচয় ছিল। ২০১০ সালে বাংলাদেশে এক কাজিনের বিয়েতে ইমনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর একপর্যায়ে আমরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই। ২০১১ সালের জুন মাসে পারিবারিকভাবে ইলিন ইমন সাহার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। রাইজিংবিডি: স্বামী-স্ত্রী  দুজন একই পেশায় আছেন। বিষয়টি কেমন লাগে আপনার কাছে ? উপমা বিশ্বাস: খুবই ভাল লাগে আমার। দুজন দুজনকে হেল্প করতে পারি। ‍কোর্টে একসঙ্গে যাওয়া-আসা করতে পারি। আইন পেশায় লেগে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ও প্রেরণা আমার স্বামীর কাছ থেকে পাই।

ব্যারিস্টার উপমা বিশ্বাস ও তার স্বামীকে রাইজিংবিডির বিশেষ সংখ্যা তুলে দিচ্ছেন প্রতিবেদক

রাইজিংবিডি: আইন পেশায় আপনার আইডল কে? উপমা বিশ্বাস: আপনি জানেন আমার সিনিয়র হলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী। আমি তাদেরকে অনুসরণ করি। কোর্টে তাপস স্যারের সাবমিশন দেখে আমি মুগ্ধ হই। আমারও ইচ্ছা তাদের মত আইনজীবী হওয়া। তাপস স্যার ও মেহেদী স্যারের সন্মান যেন আমি রাখতে পারি সেই চেষ্টা করে যাব। রাইজিংবিডি: আপনি তো একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে খবর পাঠ করেন, এ বিষয়ে জানাবেন? উপমা বিশ্বাস: আমি লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় সেরা দশে ছিলাম। তাই মিডিয়ার সংস্পর্শে থাকার জন্যই মূলত বিজয় টিভিতে সপ্তাহে দুই/একদিন খবর পাঠ করি। রাইজিংবিডি: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ? উপমা বিশ্বাস: আইন বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুক ছাত্রদের এডভাইস দেয়ার জন্য একটি সংগঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া গরীব-অসহায় বিচারপ্রার্থীদের জন্য লিগ্যাল-এইড দেয়ারও পরিকল্পনা আছে। রাইজিংবিডি: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। উপমা বিশ্বাস: আপনাকেও ধন্যবাদ এবং রাইজিংবিডির সকল পাঠককে ধন্যবাদ। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ এপ্রিল ২০১৭/মেহেদী/শাহনেওয়াজ