সাক্ষাৎকার

জিপিএ ৫ বাড়লেও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়েনি : মঞ্জু আরা বেগম

এম এ রহমান : প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। কিন্তু দেশের এই মেধাবীদের মেধার পরিচর্যা করতে ভালো কলেজের সংখ্যা সে হারে বাড়ছে না। এমনটাই জানালেন দেশের ঐতিহ্যবাহী স্কুল ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জু আরা বেগম।

অস্ট্রিয়ান নারী ভিকারুননিসা নুনের নামে প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয়। তার আগের নাম ছিল ভিক্টোরিয়া। ১৯৪৫ সালে ফিরোজ খান নুনের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ভিকারুননিসা নাম গ্রহণ করেন তিনি। নুন পরিবার সামাজিক উন্নয়নে অবদানের অংশ হিসেবে ১৯৫১ সালে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করে।২০১১ সালের ১৩ জুলাই থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মঞ্চু আরা বেগম। সম্প্রতি এইচএসসি পরীক্ষায় কলেজের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। রাইজিংবিডি : কেমন আছেন? আপনার কলেজের শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

মঞ্জু আরা বেগম : জ্বি, ভাল আছি। এ কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল নিয়ে কিছুটা মন খারাপ। তবে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থী পাস করায় সন্তুষ্ট।

রাইজিংবিডি : আপনার কলেজের এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের সারাংশ রাইজিংবিডির সঙ্গে শেয়ার করবেন কি?

মঞ্জু আরা বেগম : এবারে আমাদের কলেজে ১৩৪২ জন পরিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০৬২ জন পরিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগে ৮৪৮, মানবিক বিভাগে ১৯৩ ও বানিজ্য বিভাগে ৩০১ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। যার মধ্যে বিজ্ঞানে ৮০০, মানবিকে ৭৪ ও বানিজ্যে বিভাগে ১৮৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তিনজন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেনি।

রাইজিংবিডি : মেধা তালিকায় গত বছর আপনার প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ছিল তৃতীয় । এবার অবস্থান কত?

মঞ্জু আরা বেগম : সার্বিক মেধা তালিকায় এবারের অবস্থান পঞ্চম। তবে আশা করেছিলাম আমাদের অবস্থান অন্তত তিনের মধ্যে থাকবে। সেটা হয়নি। তারপরও সন্তুষ্ট মেয়েরা শতভাগ পাস করেছে। তবে মাধ্যমিকে আমাদের অবস্থান তৃতীয় ছিল।

রাইজিংবিডি : মেধা তালিকার ক্ষেত্রে এই নিন্মগামী হওয়ার কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

মঞ্জু আরা বেগম : আমাদের কলেজে পরিক্ষার্থীর সংখ্যা সবসময় বেশি। তাই সার্বিকভাবে ভালো ফলাফল করলেও মেধা তালিকায় পিছিয়ে পড়ছি। কারণ, মূল বিবেচনায় থাকে জিপিএ-৫। অনেক পরীক্ষার্থী অংশ নেওয়ায় কাঙ্ক্ষিত জিপিএ-৫ আসে না। যেখানে অন্যান্য কলেজ আমাদের তুলনায় কম শিক্ষার্থী নিয়ে শুধুমাত্র বেশি জিপিএ ৫ এর বিচারে এগিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের ছাত্রীরা নিয়মিতি ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে নাই। এমনকি কোচিংও আসতে পারে নাই। এ কারনেও জিপিএ ৫ কমে গেছে।

রাইজিংবিডি : বর্তমানে সারাদেশে জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?

মঞ্জু আর বেগম : বাচ্চারা ভালো ফলাফল করছে এটা অবশ্যই ভাল দিক। কিন্তু এর সাথে তাল মিলিয়ে ভালো স্কুল ও কলেজের সংখ্যা বাড়ছে না। জিপিএ-৫ পেলেও অনেক শিক্ষার্থী মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না। যে কারনে মেধার সঠিক পরিচর্যা না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মান ধরে রাখা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালগুলোতে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় থাকেন।

রাইজিংবিডি : দেশের শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতিকে আপনি কিভাবে দেখছেন ?

মঞ্জু আরা বেগম : বর্ত্মানে প্রতিটি পরীক্ষায় পাশের হার অনেক ভালো। তবে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক। এ বছর এই বিষয়টি আমাদের মেয়েদের বিপদে ফেলেছে। আর এ কারণে আমরাও আতঙ্কিত ছিলাম। প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারন ভালো ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের খরব শুনলে তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরী হয়। যা পরীক্ষার সময় মানসিকভাকে দুর্বল করে দেয়। ফলাফল খারাপ হওয়ার পেছনে এটা অন্যতম কারণ। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা তো আমাদের দেশের নিয়মিতে একটি ঘটনা।

রাইজিংবিডি : প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিবেশ নিয়ে কিছু বলুন।

মঞ্জু আরা বেগম : এই প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সবসময় ভালো। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মধুর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে দেশের খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারনে মানুষের প্রত্যাশা বেশি থাকে। সব সময় পূরণ হয় না। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল এবং থাকবে।    

রাইজিংবিডি : এত ব্যস্ততার মাঝে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মঞ্জু আরা বেগম : আপনাকেও ধন্যবাদ। রাইজিংবিডির জন্য শুভকামনা।

       

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ আগস্ট ২০১৪/এম এ রহমান/রফিক