১৯৯১ ও ১৯৯২ পরপর দুই বছর খালেদা জিয়াকে 'বছরের আলোচিত চরিত্র' হিসেবে মনোনয়ন দেয় সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’। ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ের পর গণতন্ত্র বিনির্মাণে এবং পরবর্তীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার জন্য খালেদা জিয়াকে এই উপাধি দেওয়া হয়। এরপর বিচিত্রার পক্ষে খালেদা জিয়ার একটি সাক্ষাৎকার গৃহীত হয়। সাক্ষাৎকারটি রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো।
প্রশ্ন: আপনার ক্ষমতায় আসার আট মাসকে কীভাবে পর্যালোচনা করবেন? খালেদা: এই আট মাস আমাদের সরকার গঠনের শুধু নয়, এটা গণতন্ত্রের আট মাস। নয় বছর সংগ্রামের পর জনগণ গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব যে অনেক বেশি, এটা আমাদের সকলের উপলব্ধি করা প্রয়োজন। গত নয় বছরে গণতন্ত্রের সকল প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিকে সুপরিকল্পিতভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। অর্থনৈতিক অবকাঠামো বলতে অবশিষ্ট কিছু আর নেই। আমাদের শুরু করতে হয়েছে সবকিছু নতুন করে। এজন্য আট মাস সময় খুব একটা বেশি নয়। আবার এ সময়টাকেও দু’ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথম অংশে আমি অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের সরকারে অংশগ্রহণ করি। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংসদীয় পদ্ধতি চালু হওয়ার পর আমি সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নিই এবং মন্ত্রিসভা গঠন করি। সেটা মাত্র তিন মাসের মতো হয়েছে। আপনাদের অজানা নয় যে, নয় বছরে আমাদের উপর দিয়ে কত ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু জনগণের সমর্থনই আমাদের দিয়েছে মনোবল। নয় বছরের জঞ্জাল আমাদের পরিষ্কার করতে হচ্ছে। উনচল্লিশ দিনের মধ্যে আমাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়ের। তিনবার বন্যা হয়েছে। এসব আমরা সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করেছি। আড়াই মাসের মাথায় আমরা বাজেট পেশ করেছি। একটা রেফারেন্ডামের মাধ্যমে সরকার পদ্ধতি বদল করা হয়েছে। এ সময়টা ছিল গণতন্ত্রে উত্তরণের সময়; আমরা এখন গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট রয়েছি।
প্রশ্ন: বিরোধী দলগুলো বলছে সংসদকে যথেষ্ট কার্যকরী করে তোলা হচ্ছে না। আপনি কি মনে করেন সংসদ শক্তিশালী ও কার্যকর করে তোলার আরও অবকাশ আছে? খালেদা: বিরোধী দল যদি বলে সংসদকে আমরা শক্তিশালী করছি না, এটা যুক্তিতে টিকবে না। বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। আমি তো আমাদের প্রয়োজনেই সংসদকে শক্তিশালী ও কার্যকর রাখতে চাই। একটি দেশে সমস্যা থাকবে, মতপার্থক্যও থাকবে। তার জন্যেই তো সংসদ। সেখানে আলোচনা হচ্ছে, বিতর্ক হচ্ছে, সমাধানও হচ্ছে। এখানে আরও একটি কথা বলা প্রয়োজন, জনগণ আমাদের নির্বাচিত করেছে এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছে। এই মৌলিক বিষয়টির প্রতি সকলের শ্রদ্ধা থাকা আবশ্যক। গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য প্রয়োজন দায়িত্বশীল বিরোধী দলের। সুতরাং সংসদকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলেরও সমান ভূমিকা রয়েছে।
প্রশ্ন: বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক সহযোগিতামূলক করার জন্য আপনাদের উদ্যোগ আছে কি? খালেদা: আমরা গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই। সে কারণেই আমরা সবসময় বিরোধী দলের সহযোগিতা চাই। বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী দলের সদস্যগণ রয়েছেন। সেখানেও তাঁরা মূল্যবান অবদান রাখতে পারছেন।
প্রশ্ন: বিএনপি আবারও খাল খননের কর্মসূচি শুরু করেছে। কৃষিক্ষেত্রে এই কর্মসূচিতে কতটুকু সুবিধা হবে সে সম্পর্কে তথ্যভিত্তিক মূল্যায়ন করেছেন কি? খালেদা: শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান খাল কাটার মাধ্যমে তিনটি বিষয়ের উপর জোর দিতে চেয়েছিলেন। এক. কৃষি যে দেশের অর্থনীতির ভিত- এই চেতনা জনগণের মধ্যে সৃষ্টি করা ও তা স্থায়ী করা। দুই. কর্মের সুযোগ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করা। তৃতীয় হলো, সবার মনে একটা অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করা এবং কায়িক শ্রমকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া। এর মূল দর্শন হলো আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মবিশ্বাস। তিনি প্রায়ই বলতেন-‘পানি, মাটি ও মানুষের সমন্বয় সাধনের ওপরই নির্ভর করছে দেশের অগ্রগতি।’ আমি মনে করি খাল কাটায় রয়েছে সনাতন দেশজ কৃষি ঐতিহ্য। একদা এখানে খালের সাহায্যেই সেচের পানি পাওয়া যেত। আমরা মনে করি পুরনো খালগুলো খনন করা হলে বন্যা কম হবে, সারা বছর পানি পাওয়া যাবে। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় মাত্র দুবছরে খাল কাটা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে বছরে বারো লাখ টনেরও বেশি অতিরিক্ত শস্য উৎপাদিত হয়। দেশ দ্রুত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।
প্রশ্ন: প্রেসিডেন্ট জিয়া আরও একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন: শিল্পের বিরাষ্ট্রীয়করণ। শিল্প সম্পর্কে আপনার নীতিমালা কী হবে? খালেদা: দায়িত্বভার গ্রহণের পরপরই গত জুলাই মাসে আমরা আমাদের সরকারের নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তবাজার অর্থনীতির অবকাঠামো সৃষ্টি করা। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রণীত হয়েছে যতুন দিল্পনীতি, যা একাধারে উদার ও উৎপাদনমুখী। এতে বেসরকারি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া ব্যক্তিগত উদ্যোগ, মেধা ও উৎপাদনই হবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এখন থেকে সরকারের ভূমিকা হবে নিয়ন্ত্রণমূলক নয়, সহায়তামূলক। রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রযুক্তি ও পুঁজির স্বল্পতা পূরণের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা আমাদের নতুন শিল্পনীতির অন্যতম লক্ষ্য। সেজন্য বিদেশি পুঁজির ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ অংশীদারিত্বের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পল্লী এলাকার বেকারত্ব মোচন এবং পল্লীর অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের জন্য ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের ওপর আমরা জোর দিয়েছি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎপাদনশীল খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। রুগ্ন শিল্পকে পুনর্বাসন করাও আমাদের আরেকটি লক্ষ্য। সর্বোপরি আমরা শিল্প স্থাপনের অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজতর করেছি। আমাদের এসব নীতি দেশে-বিদেশে অভিনন্দিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা এর ফল পেতে শুরু করেছি। শিল্পায়নে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে।
প্রশ্ন: মানুষ শহরে আসছে কাজের জন্য। শিক্ষিত তরুণরা কর্মহীন, হতাশ-এর সমাধান কীভাবে করবেন? খালেদা: গ্রামের মানুষের শহরে আগমন বেড়েছে আশির দশকের মাঝামাঝি। এ সময় উপজেলা করা হয়েছিল, কিন্তু গ্রামে কাজের সংস্থান করা হয়নি। গ্রামে কাজের সংস্থান থাকলে মানুষ নগরমুখী হবে না। শিক্ষিত তরুণদের সম্পর্কে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। এ ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপও গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে সবার কর্মের সংস্থান সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য দরকার ব্যাপক শিল্পায়ন। প্রয়োজন শিল্প উদ্যোগ। সেই লক্ষ্যেই প্রণীত হয়েছে আমাদের শিল্পনীতি।
প্রশ্ন: আপনি আত্মকর্মসংস্থানের উপর জোর দিচ্ছেন? খালেদা: আমরা দেশের বেকার সমস্যা দূর করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে অনেকগুলো আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
প্রশ্ন: সন্ত্রাসের কারণে দেশের বেশকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সন্ত্রাস দমনে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য ? খালেদা: এ অভিযোগ সত্য নয়। আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সন্ত্রাস ও শিক্ষা পাশাপাশি চলতে পারে না। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস আমরা সৃষ্টি করিনি। এটা নয় বছরের স্বৈরাচারী শাসনেরই ফল। আমার শিক্ষার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে শিক্ষাঙ্গন তথা সমাজদেহ থেকে সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ ব্যাপারে কখনো আন্তরিকতার কোনো অভাব আমাদের ছিল না। আজও নেই। এই লক্ষ্যে আমি প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দুবার বৈঠক করেছি। সংসদে সকল দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত সংসদীয় কমিটি বর্তমানে বিষয়টি তলিয়ে দেখছে। আমরা তাদের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। আমরা মনে করি এটা একটা জাতীয় সমস্যা। এককভাবে সরকারের ওপর এর সমাধানের দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া সমীচীন হবে না। এর দায়দায়িত্ব আমাদের সবার। এজন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে।
প্রশ্ন: ন্যূনতম সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও বেশকিছু অনভিজ্ঞ মন্ত্রী- এই দুটো বিষয়ের জন্য আপনি কোনো সমস্যা অনুভব করেন? বলা হয়ে থাকে বিএনপির বেশকিছু যোগ্য লোক মন্ত্রিসভার বাইরে আছেন দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? খালেদা: সংসদে আমাদের রয়েছে সুবিধাজনক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সুতরাং সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমাদের জন্য কোনো সমস্যাই নয়। আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন সংসদে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে আমরা এমনকি সর্বসম্মত সমর্থন পর্যন্ত লাভ করেছি, যেমনটি ঘটেছে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী বিল পাশের বেলায়। আপনার প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশের জবাবে আমি বলতে চাই, ‘অনভিজ্ঞ মন্ত্রী’ বলতে কিছু নেই। গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় মন্ত্রীরা সার্বিক প্রশাসনে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা বিচার করতে হবে রাজনৈতিক বাক্তিত্ব হিসেবে। বিএনপি দলছুট ব্যক্তিদের প্লাটফরম নয় যে, স্বৈরশাসন আমলের মতো বিভিন্ন দলের সাবেক মন্ত্রীরা সব এসে এখানে ভিড় জমাবে। মন্ত্রিপরিষদে যাঁরা আছেন তাঁদের সবারই রয়েছে জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস। সেটাই তাঁদের বড় অভিজ্ঞতা। কারণ অনেকে আগেও মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও তাঁদের প্রশাসনিক ও তাঁদের দায়িত্ব হচ্ছে জনকল্যাণ। অধিকন্তু আমাদের মন্ত্রীদের অন্যান্য পেশায় বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁরা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গেই নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন এবং ভালো কাজ করছেন।
আপনার অবগতির জন্য জানচ্ছি- বিএনপিতে কোনো অন্তর্দ্বন্দ্ব অনেককেই মন্ত্রিপরিষদের বাইরে থাকতে হয়। নেতৃত্বের দিক বা কলহ নেই। কোনো দলের সবাই মন্ত্রী হয় না। সংগঠনের স্বার্থে থেকে, দলের দিক থেকে এরা কেউই মন্ত্রীদের চেয়ে কোনো অংশ খাটো নন। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নেতৃবৃন্দের অবস্থান বিচার করলেই আপনি এর সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।
প্রশ্ন: আট মাসের শাসনামলে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে কি? পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে আপনার পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক পার্থক্য কী? খালেদা: জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণ পৃথিবীর সর্বত্র সমর্থন লাভ করেছে। একটি গণতন্ত্রকামী জাতি হিসেবে এখন আমরা বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে সমাসীন। বিশ্বব্যাপী এই শুভেচ্ছাই হচ্ছে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে এটা ছিল না। বাংলাদেশকে তখন তৃতীয় বিশ্বের একনায়ক শাসিত গণতন্ত্রবিহীন একটি দেশ হিসেবে অবহেলার চোখে দেখা হতো।
বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের তিনটি মূলনীতি হচ্ছে-আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করা, শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে সাধারণভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশেষভাবে মুসলিম উম্মাহর সাথে সহযোগিতা বাড়ানো এবং দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা। আমরা জাতিসংঘের আদর্শ ও জোট নিরপেক্ষ নীতিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যেসব অগ্রগতি আমরা অর্জন করেছি তা হচ্ছে: আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভূমিকা এখন আগের চেয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশ এ বছর গত দুই যুগের মধ্যে সর্বাধিক বৈদেশিক সাহায্য পেয়েছে।
বেশ কয়েকটি দেশ আমাদের ঋণ মওকুফ করে দিয়েছে। আরও অন্যান্য দেশ আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতর অর্থনৈতিক সহযোগিতা স্থাপনের ইচ্ছা জানিয়েছে। এতে করে আমাদের গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় সমর্থনের অভিব্যক্তিই প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রশ্ন: পেশাজীবীরা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করছে। অনেক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী ঘটনাও ঘটছে। এ বিষয়গুলো কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
খালেদা: শ্রমজীবী ও পেশাজীবীদের দাবির প্রতি সরকার সবসময়ই সহানুভূতিশীল। তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। দেশের বর্তমান অবস্থা ও সম্পদের সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতেই তাদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সবাইকে বর্তমান বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। চাপ প্রয়োগ গণতান্ত্রিক আচার-আচরণসম্মত নয়। দাবি আদায় হবে সাধ্যসীমার মধ্যে, পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে। স্বৈরশাসকের অপছায়ায়ই সন্ত্রাস হচ্ছে। এসব সন্ত্রাসী ঘটনার ভেতরের কারণটা কী তা তলিয়ে দেখতে হবে। শ্রমিক ও পেশাজীবীদের সব অধিকার যেখানে সংরক্ষিত হচ্ছে, সেখানে দাবি আদায়ের জন্য দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। আমাদের কষ্টার্জিত নবলব্ধ গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দমনে আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করি।
সূত্র: খালেদা, মহিউদ্দিন আহমদ, পৃষ্ঠা নম্বর:১৭৫