সাক্ষাৎকার

বিটিভির ব্যর্থতার প্রধান কারণ নিয়োগ পদ্ধতি : ম. হামিদ

বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) প্রযোজক থেকে এক সময় তিনি প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ সময়। ফলে দেশের সাংস্কৃতিক আবহ তার অজানা নয়। টেলিভিশনের আঙ্গিনা তার চিরপরিচিত। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন, নাট্যজগৎ কিংবা মিডিয়া- সব জায়গাতেই রয়েছে তার সমান পদচারণা। রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে ম. হামিদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মহিউল ইসলাম। তার নেয়া সাক্ষাৎকারটি পাঠকের উদ্দেশে প্রকাশ করা হলো।রাইজিংবিডি : বিটিভিতে আপনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। বিটিভি’র সঙ্গে আপনি যুক্ত হলেন কীভাবে?ম. হামিদ : আমি ১৯৭৪ সালে অ্যাডমিন ক্যাডারের চাকরি ছেড়ে দেই। এরপর বিভিন্নভাবে সময় কেটেছে। আমি মূলত ১৯৮০ সালে বিটিভিতে প্রযোজক হিসেবে যোগদান করি। এরপর প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবং আরও পরে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পাই। রাইজিংবিডি : মাঝখানের এই বছরগুলো আপনার কীভাবে কেটেছে?ম. হামিদ : সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। বিশেষ করে এই সময়ে এসে আমি যখন পেছনে ফিরে তাকাই তখন অনেক কিছুই দেখতে পাই। এই যেমন একটা সময়ে এসে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্য নির্মাণের যে দাবি সেখানে সম্পৃক্ত হই। আজ গর্বের সঙ্গে আমি বলতে চাই, এই ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজের সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলাম। এই সময়ে আমি ডাকসুর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন) সভাপতি নির্বাচিত হই। রাইজিংবিডি : বলা হয়ে থাকে আশির দশক বিটিভির স্বর্ণযুগ। এটা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল?ম. হামিদ : আশির দশককে স্বর্ণযুগ বলার পেছনের যে কারণ, তা খুবই যুক্তিযুক্ত। কারণ ওই সময়টাতে বিটিভিতে একঝাক মানুষ যোগদান করেন যাদের আলাদা আলাদা সফল সাংস্কৃতিক পটভূমি ছিল। এদের মধ্যে ছিলেন নাসিরুদ্দিন, খ ম হারুন, আবু তাহের, মোস্তাফা মনোয়ারের মতো মানুষ। সাথে সাথে আমাদের সিনিয়র যারা সত্তরের দশকে নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাদের অবদানও কম ছিল না। তাদের মধ্যে ছিলেন আতিকুল হক চৌধুরী, বরকতুল্লাহ, মোস্তাফিজ সাহেব প্রমুখ। সকলের সম্মিলিত সৃজনশীল মেধা এবং চেষ্টার ফসল ছিল সেটা।  রাইজিংবিডি : বিটিভি কী এখন দর্শক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে?ম. হামিদ : বিটিভি এখন পিছিয়ে পড়েছে। আগের সেই বিটিভি এখন আর নেই।রাইজিংবিডি : এর কারণগুলো কী বলে মনে করেন?ম. হামিদ : প্রধান কারণ নিয়োগ পদ্ধতি বদলেছে। মনে করেন একজন বিদ্যুৎ বিভাগে কাজ করেন। বিদ্যুৎ সরবারহ ঠিক থাকলে তাকে আর অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না। এখানে সৃজনশীলতা চর্চার জায়গা খুবই কম। কিন্তু মিডিয়া হলো পুরোপুরি সৃজনশীলতার জায়গা। সৃষ্টিশীল মানুষেরাই এখানকার প্রাণ। এ ধরনের মানুষ কিন্তু পিএসসি’র পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে পাওয়া যাবে না। কারণ পিএসসি’র পরীক্ষার মাধ্যমে কারো সৃজনশীলতা বিচার করা যায় না।  রাইজিংবিডি : এ ক্ষেত্রে বিটিভি’র করণীয় কী?ম. হামিদ : বিটিভিতে নিয়োগের সময় পিএসসি’র নিয়মের পাশাপাশি সৃজনশীলতার জন্য পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া সফল কোনো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে এর সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। আমি এ ক্ষেত্রে খারাপ কিছু দেখি না। রাইজিংবিডি : বিটিভি’র চেয়ে কী বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে সুযোগ সুবিধা কম না বেশি?ম. হামিদ : বিটিভি’র চাকরি আর দশটা সরকারি চাকরির মতো। এখানে পাঁচ বছর পরপর আপনি নিয়মিত প্রমোশন পাবেন। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনি যদি সফল না হন এ জন্য আপনাকে তিরস্কার করা হবে না। কিন্তু বেসরকারি চ্যানেলগুলোতে আপনাকে প্রতিনিয়ত সৃজনশীলতার পরীক্ষা দিয়েই টিকে থাকতে হবে। আপনি সফল না হলে যে কোনো সময় আপনাকে তারা বিদায় বলে দিতে পারে। তাই এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ এবং প্রতি মুহূর্তে সৃজনশীলতার উন্নয়ন এবং অসফল হলে তিরস্কার কিংবা তলব এটা বিটিভিতে চালু করা জরুরি।   রাইজিংবিডি : আপনি বিটিভি থেকে বিচ্ছিন্ন হলেন কীভাবে?ম. হামিদ : ২০০৬ সালে সরকার থেকে আমাকে অবসর গ্রহণে বাধ্য করা হয়। এর পর ২০১২ সালে আমি আবার বিটিভি থেকে ডাক পাই এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।রাইজিংবিডি : বিটিভি সম্প্রতি ৫০ বছর পার করল। আপনার মন্তব্য জানতে চাচ্ছি?ম. হামিদ : অনেক দিন বিটিভি’র সঙ্গে ছিলাম। আপতত নেই। দূর থেকে বিটিভি’র উজ্জ্বল সাফল্য দেখতে চাই এবং কল্যাণ কামরা করি।রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ডিসেম্বর ২০১৪/তাপস রায়