আইন ও অপরাধ

এখনো রাহুমুক্ত হয়নি প্রেসক্লাব

রিশিত খান : জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচন ও কমিটি গঠন প্রসঙ্গে সপ্তাহ দুয়েক আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস পড়ে কষ্ট পেয়েছিলাম। কষ্টটা ছিল একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবেই। স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলেন আমাদেরই সহযোদ্ধা সিনিয়র সাংবাদিক নঈম নিজাম।

 

১৭ মে প্রকাশিত ওই স্ট্যাটাসের শিরোনাম ছিল ‘প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগ-জামায়াত ঐক্য!।’ ওতে তিনি লিখেছেন, ‘জাতীয় প্রেসসক্লাবের নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাচন কমিশনের সব সদস্য পদত্যাগ করলেন। তাদেরকে বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও বিএনপির সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা বিনা ভোটে প্রেসক্লাব দখল চান। ঐক্য হয়েছে আওয়ামী লীগ-জামায়াতের।’

 

তিনি লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি, জামায়াতে ইসলামী সাধারণ সম্পাদক এক প্যানেল।’ নির্বাচন কমিশন অন্যায় আব্দার মানতে নারাজ। তারা ভোট করাতে চেয়েছিলেন। তাই তাদেরকে বাধ্য করা হলো পদত্যাগে। বেশ বেশ! জাতির বিবেক সেজে টক শোতে অথবা সংবাদপত্রে আমরা গণতন্ত্রের ছবক দেবো, বড় বড় কথা বলবো, আর নিজেরা ভোটাধিকার ধ্বংস করবো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রক্ষক সেজে ঐক্য করবো জামায়াতের সঙ্গে। অসাধারণ!’

 

ওই স্ট্যাটাসে তোপের মুখে পড়েন সিনিয়র ওই সাংবাদিক। আওয়ামীপন্থি সাংবাদিকরা নঈম নিজামের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নঈম নিজামের আশঙ্কা কিছুটা হলেও সত্য হলো। আজ বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাবের এক সভায় দুই পক্ষের মধ্যে অর্থাৎ বিএনপি-আওয়ামীপন্থি সাংবাদিকদের মধ্যে সেই সমঝোতাই হয়। তবে আশার কথা হলো, একেবারে সিলমারা জামায়াতীদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি।

 

এ বিষয়ে রাইজিংবিডিতে বৃহস্পতিবার সংবাদ প্রকাশিত হয়। পাঠক দেখে নিন সেই সংবাদ।

 

জাতীয় প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি মনোনয়ন : অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব সদস্যদের এক সমঝোতা বৈঠকে ১৭ সদস্যের কমিটি মনোনয়ন করা হয়। সভাপতি মনোনীত হয়েছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী।

 

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এবং আমিরুল ইসলাম কাগজী সহ-সভাপতি মনোনীত হয়েছেন।

 

এ ছাড়া যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আশরাফ আলী ও ইলিয়াস খানকে। আর কোষাধ্যক্ষ পদে মনোনীত হয়েছেন কার্তিক চ্যাটার্জি।

 

সদস্য পদে মনোনীত হয়েছেন আমানুল্লাহ কবীর, খন্দকার মনিরুল আলম, আজিজুল ইসলাম ভূইয়া, সাইফুল আলম, মোল্লা জালাল, শ্যামল দত্ত, শামসুদ্দিন আহমেদ চারু, সরদার ফরিদ, শামসুল হক দূররানী এবং হাসান আরেফিন।

 

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক সদস্যদের সমঝোতার মধ্যে দিয়ে এ কমিটি মনোনীত হয়েছে। তবে এবার কমিটিতে স্থান পাননি জামায়াত সমর্থক সাংবাদিকরা। পরবর্তী বৈঠকে নতুন কমিটি পাস করানোর পর কাজ শুরু করবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

 

সকালে দৃশ্যপট থেকে জামায়াতকে সরিয়ে সমঝোতার কমিটি গঠনের জন্য সমঝোতা বৈঠক শুরু হয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ সমর্থক জ্যেষ্ঠ  সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএনপি সমর্থক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর ও খন্দকার মনিরুল আলমসহ দুই পক্ষের সাংবাদিক নেতারা ছিলেন।

 

প্রেসক্লাবের সদস্যপদ সবার জন্য উন্মুক্ত করার দাবি অনেক দিনের। জাতীয় প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৩ সাল যার প্রতিষ্ঠাকাল। প্রায় ছয় দশক বয়স জাতীয় প্রেসক্লাবের। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এসেছে এই সময়ের মধ্যে।

 

আমরা মর্মাহত যে, সাংবাদিকদের জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানটি রক্তাক্ত হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের হিংস্র থাবায়।

 

ভাবতেই কষ্ট হয় এই প্রেসক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে  দণ্ডিত আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মতো কুখ্যাত ব্যক্তিরা। তারা দৈনিক সংগ্রাম ও সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সাংবাদিকতার নামে ওই সদস্যপদ লাভ করেন।

 

অথচ দেশের অনেক প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক কিংবা সিনিয়র সাংবাদিক সদস্য হতে পারেনননি। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের অগণিত সাংবাদিক এখনো সদস্য হতে পারেননি। আমি নিজেও দুই যুগ ধরে মূলধারার সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকার পরও প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারিনি।

 

বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বিষয়টি আমলে নেয়। দৃষ্টি দেন সাংবাদিক সমাজের বরেণ্য নেতারা। বলতে গেলে তাদের সুদৃষ্টির জন্যই জাতীয় প্রেসক্লাব বিএনপি-জামায়াতের কবল থেকে কিছুটা হলেও রাহুমুক্ত হতে পেরেছে। তবে এখানেই শেষ নয়। রাহুমুক্ত করতে হবে পুরোপুরি। এখনো যে সব আগাছা রয়েছে, তা পরিষ্কার করে জাতীয় প্রেসক্লাবকে একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। যেখানে স্থান পাবেন প্রকৃত গণমাধ্যমকর্মীরা। তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানটি।

 

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

       

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ মে ২০১৫/রিশিত/সুমন