আইন ও অপরাধ

আস্তানাটি ছিল জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালাম এলাকার জঙ্গি আস্তানাটি ছিল জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির। যার নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল্লাহ। তল্লাশি অভিযানের দ্বিতীয় দিন আস্তানা থেকে শক্তিশালী ইমপ্রোভাইজড অ্যাক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার বিকেলে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘ভবনের ছয় তলা থেকে প্যাকেট করা ইম্প্রোভাইজড অ্যাক্সপ্লোসিভ ডিভাইস-আইইডি (অত্যাধুনিক বিস্ফোরক) উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো কার্টনের ভেতর সিল করা অবস্থায় রাখা ছিল। বেশ কিছু দেশীয় ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ভেতরে এখনো প্রচুর আইইডি ও বোমা অবিস্ফোরিত অবস্থায় রয়েছে। সকাল থেকেই র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ভবনে তল্লাশি অভিযান শুরু করে।’ মুফতি মাহমুদ জানান, আস্তানায় একটি বহুতল ভবনের নকশা পাওয়া গেছে। যেটি কোনোভাবেই ফ্ল্যাটে থাকার কথা ছিল না। কোনো বড় ভবনে নাশকতার জন্যই এ নকশা তৈরি করা হতে পারে। জীবদ্দশায় ফোনে আত্মসমর্পণের আহ্বানকালে নিহত জঙ্গি আবদুল্লাহর কাছ থেকে ‘ডন ভাই’ নামের এক ব্যক্তির নাম জানা গেছে। তার সন্ধান চলছে। তার সঙ্গে আরো কয়েকজন আত্মঘাতী জঙ্গি আছে। যাদের অবস্থান নিশ্চিত হতে নজরদারি অব্যাহত আছে। র‌্যাব জানায়, জেএমবির একটি অংশের প্রধান সারোয়ার জাহান, তামিম চৌধুরী, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজসহ অনেকেই আবদুল্লাহর এ আস্তানায় রাত কাটিয়েছে। এখানে এসে জঙ্গিরা গোপনে প্রশিক্ষণও নিত। বিশেষ করে বিস্ফোরক দ্রব্য পরিচালনার ক্ষেত্রে। আর এসবই করতো জঙ্গি আবদুল্লাহ। এ কারণে সে পঞ্চমতলা ও ষষ্ঠতলার পুরোটি ভাড়া নেয়। জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি যেন এখানে থাকতে পারে সেজন্যই ফ্লোরগুলো ভাড়া নেওয়া হয়। ইলেকট্রিক বিষয়ে পারদর্শী এবং নিরাপদ জঙ্গি আস্তানার জন্য তামিম-সরোয়ারের বেশ আস্থাভাজনও ছিলেন আবদুল্লাহ। আবার তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে অতি সহজেই মিশে থাকতেন। এ কারণে ১২ বছর ধরে এ ভবনে থাকতে পেরেছেন। কবুতর পালা থেকে বিক্রি এবং আইপিএস বিক্রি ছিল লোক দেখানো। সরেজমিন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় তেমন কিছুই নেই। পুড়ে নাই এমন নিত্য প্রযোজনীয় জিনিস পড়ে আছে বিভিন্ন জায়গায়। এরই মধ্যে বিভিন্ন বিস্ফোরকও পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর দেয়ালের পলেস্তার খসে গেছে। বোমার স্প্লিন্টার ফুটো হয়ে চতুর্থতলায় যায় এবং আগুন ধরে উঠে।

এদিকে র‌্যাবের এক হিসাবে দেখা গেছে, সর্বশেষ এ সাতজনকে নিয়ে হলি আর্টিজানে হামলার পর প্রায় ৭০ জন জঙ্গি আত্মঘাতী হয়ে মারা গেছে। এর মধ্যে পুরুষ-নারী থেকে শিশুও রয়েছে। উল্লেখ্য, সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুরের মাজার রোডের বর্ধমানবাড়ি এলাকার ‘কমল প্রভা’ বাড়িটি ঘেরাও করে র‌্যাব। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০ টায় চারটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলেই আবদুল্লাহসহ সাতজনের প্রাণহানি ঘটে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭/মাকসুদ/সাইফুল