আইন ও অপরাধ

বড় হামলার প্রস্তুতি চলছিল মিরপুরের আস্তানায়

নিজস্ব প্রতিবেদক : মিরপুরের মাজার রোডের ‘কমল প্রভা’ জঙ্গিদের নিরাপদ ঘাঁটি বা আস্তানা। এখানে বসেই বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি চলছিল। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা আব্দুল্লাহ যার প্রধানের দায়িত্বে ছিল। ধরা পড়ায় জঙ্গিদের সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা দাবি করছেন। শুক্রবার বিকেলে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আস্তানার ভেতর থেকে একটি নকশা উদ্ধার করা হয়। ১৫তলা ভবনের নকশা। ভবনের কোথায় কীভাবে বোমা রাখা হবে তার বিস্তারিত আছে। এই ভবনকে ঘিরে এখানে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছিল। এজন্য বিপুল পরিমাণ শক্তিশালী বোমা এবং বিস্ফোরকও মজুদ করা হয়। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। একই সঙ্গে এ পরিকল্পনায় অন্য কারা জড়িত তাদের বিষয়েও নজরদারি শুরু হয়েছে।’ র‌্যাব জানতে পেরেছে, এ পরিকল্পনার প্রধান ছিল জঙ্গি আব্দুল্লাহ। জঙ্গি আস্তানার পঞ্চম তলার দুটি ইউনিটে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকত সে। আর ষষ্ঠ তলার অর্ধেক অংশে সে কবুতর পালত এবং চিলেকোঠার মতো এখানে আবার বিভিন্ন তাক করে বোমার তৈরির বিস্ফোরক রাখত। বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, পুরো চিলেকোঠায় বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন রাসায়নিক বিস্ফোরক, বোতল বোমা,  সালফার, গান পাউডার, কেমিক্যাল ভরা ৫/৬টি প্লাস্টিকের ড্রাম, প্যাকেট করা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ও বিপুলসংখ্যক দেশীয় অস্ত্র আস্তানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। এগুলো আবার বাক্সের মতো তালাবদ্ধ করে রাখত আব্দুল্লাহ। এ থেকে র‌্যাব কর্মকর্তারা ধারণা করছেন আব্দুল্লাহর বোমা বানানোর কারখানাও ছিল এটি। স্থানীয় লোকজন বলছেন, নিহত জঙ্গি আব্দুল্লাহ ও তার ভাই ইলেকট্রিকের কাজ করত। আইপিএস, স্ট্যাবিলাইজারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে তারা স্টেডিয়াম মার্কেটে বিক্রি করত। এক সময় আব্দুল্লাহ ইলেকট্রিকের ব্যবসার আড়ালে জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করে। তবে সে সব সময় সাধারণের মতো থাকত। এলাকার বিভিন্ন দোকানে বসে থাকত। কিংবা কাজের জন্য বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও যেত। তবে কখনোই বুঝতে দিত না সে এত বড় জঙ্গি। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, আব্দুল্লাহর গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। ২০০৫ সাল থেকে সে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। ইলেকট্রিক কাজে বিশেষ পারদর্শী হওয়ায় নব্য জেএমবির তামিম-সরোয়ার গ্রুপের বিস্ফোরক শাখার দায়িত্ব পায়। বিশেষ করে হলি আর্টিজানে হামলার আগে থেকেই তার ওপর এ দায়িত্ব দেয় তামিম চৌধুরী। এখান থেকেই বিভিন্ন সময় বোমা বা বিস্ফোরক তৈরি করে জঙ্গি আস্তানায় সরবরাহ করত। এজন্য তার বেশ কয়েকজন কর্মচারীও ছিল। আব্দুল্লাহর দুজন কর্মচারী মারা গেলেও বেশ কয়েকজনকে এখনো খোঁজ করা হচ্ছে। সেখানে আরও ছয় থেকে সাতজন থাকার কথা ছিল। সর্বশেষ ওই ভবন ঘিরে তার এখন পরিকল্পনা চলছিল। উল্লেখ্য, সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাজার রোডের বর্ধন বাড়িটি ঘেরাও করে র‌্যাব। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টায় চারটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলেই আব্দুল্লাহসহ সাতজনের প্রাণহানি ঘটে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭/মাকসুদ/মুশফিক