নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৩ সালে প্রণীত শিশু আইনের অস্পষ্টতা দূরীকরণে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় সমাজকল্যাণ সচিবকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৯ অক্টোবর তাকে সশরীরে হাজির হতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের আইনসচিব এবং লেজিসলেটিভ ও ড্রাফটিং সচিবকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সম্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শিশু আইনে মামলায় আটক মো. দেলোয়ার হোসেন ও হেমায়েত উল্লাহ দেওয়ানের জামিন শুনানিকালে আদালত এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ ও আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামাল পারভেজ। এর আগে ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর আদালতের আদেশ অনুযায়ী ব্যাখ্যা না দেওয়ায় আইন, লেজিসলেটিভ ও ড্রাফটিং এবং সমাজকল্যাণ সচিবের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। মামলার বিবরণে জানা যায়, ঢাকা, কক্সবাজার ও রংপুরে শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দায়ের করা পৃথক চারটি মামলার আসামিরা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান। এসব মামলার সব আসামি প্রাপ্তবয়স্ক। শিশু আদালত এসব প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের জামিনের আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করায় হাইকোর্ট রুল জারি করেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে চারটি আদালতের বিচারকেরা নিজ নিজ ব্যাখ্যা লিখিতভাবে আদালতে দাখিল করেন। ব্যাখ্যায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দ্য চিলড্রেন অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ এর বিধান অনুযায়ী যেসব মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ভিকটিম শিশু ওইসব মামলা বিচারের জন্য কিশোর আদালতে প্রেরণ করা হতো। আর যেসব মামলার কেবল অভিযুক্ত ব্যক্তি শিশু, ওই সব মামলার অপরাধ আমলে নেওয়ার পর মামলাটি বিচারের জন্য কিশোর আদালতে পাঠানো হতো। কিন্তু ‘শিশু আইন, ২০১৩’ এর ১৭(১) ধারার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে। কারণ ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু বা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু কোনো মামলায় জড়িত থাকলে যেকোনো আইনের অধীনেই হোক না কেন, ওই মামলা বিচারের এখতিয়ার কেবল শিশু আদালতের থাকবে।’ তবে আইনের ধারা ১৮, দফা-(ক) এ শিশু আদালতকে ফৌজদারি কার্যবিধির দায়রা আদালতের ক্ষমতা দেওয়া হলেও ওই আইনে শিশু আদালতকে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ এর কোনো ধারার অপরাধ আমলে নেওয়া কিংবা বিচারের সুনির্দিষ্ট এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। শিশু আইনের ৩৩(১) ধারা অনুসারে শিশু আদালত অভিযুক্ত কোনো শিশুকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারবেন।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ অক্টোবর ২০১৭/মেহেদী/এসএন