আইন ও অপরাধ

মোবাইল কোর্টের অপব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : মোবাইল কোর্ট অবশ্য্ই রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে অতীব প্রয়োজন। কিন্তু এর অপব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন। লক্ষীপুরের প্রাক্তন সিভিল সার্জনকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম ও সাজা প্রদানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুজ্জামানকে কঠোরভাবে সর্তক করে এ পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আদালত আশা করে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় দায়িত্বরতরা মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী পালন করবেন। বাড়িতে বসে মোবাইল কোর্ট চলবে না। ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়িতে বসে আদেশ দেওয়া চলবে না। আদালত বলেন, প্রাথমিক একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা তদারকির জন্য একজন এডিসিকে নিযোগ করা হয় বলে দাবি করা হয়, যা আদালতের কাছে সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা-বানোয়াটরূপে প্রতীয়মান হয়েছে। কোথাও কোনো বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নকল তদারকির জন্য এডিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে কখনোই দেখা যায়নি। আদালত বলেন, কাকলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা তত্ত্বাবধানের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই যথেষ্ট। স্বীয়স্বার্থের কারণে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে টেলিফোনে তলব করেন। পরে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দণ্ডবিধির ১৮৬ ধারা অনুযায়ী ডাক্তার সালাহ উদ্দিনকে অযৌক্তিক শাস্তি প্রদান করেন। ফলে স্পষ্ট হয় যে, ঘটনা চলাকালে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। এতে স্পষ্ট টেলিফোনের প্রেক্ষিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেই এবং এডিসির নির্দেশ মতো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ডাক্তার সালাহ উদ্দিনকে শাস্তি প্রদান করেন। আদালত বলেন, একটি সভ্য সমাজে সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। ইতিপূর্বে দেখা গিয়েছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য প্রণীত আইন অমান্য করে নিজ ইচ্ছেমতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোবাইল কোর্টের কার্যেক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এমনকি নিজেদের স্বীয়স্বার্থ ও ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য আইনটির অপব্যহার হচ্ছে, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই মামলাটি। সিভিল সার্জন একজন অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্ত সরকারি কর্মকর্তা। তার আচরণ অনেক বেশি সহনশীল, গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন আদালত। আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও জনপ্রশাসন সচিবকে আদেশ দিয়ে আদালত বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের ভবিষ্যতে যেন এমন কোনো পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া না হয় যে, তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন। পরে প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন শরীফকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা  করায় সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম ও সাজা প্রদানকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নুরুজ্জামানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। আদালতে এডিসির পক্ষে অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ন শুনানি করেন। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। গত ৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন পরিচালিত শহরের কাকলি স্কুলের প্রবেশপথে আগে-পরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম ও ডা. সালাহ উদ্দিন শরীফের বড় ছেলে মিনহাজের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় ডা. সালাহ উদ্দিন এগিয়ে গিয়ে পরিচয় জানতে চান। কিন্তু এডিসি পরিচয় না দিয়ে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ ডেকে ডাক্তারকে আটক করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সালাহ উদ্দিন শরীফকে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) শেখ মুর্শিদুল ইসলামকে পরে লক্ষ্মীপুর থেকে প্রত্যাহার করা হয়। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ডিসেম্বর ২০১৭/মেহেদী/সাইফুল