আইন ও অপরাধ

শুনানির অপেক্ষায় এজলাসে খালেদার আড়াই ঘণ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে পৌঁছালেও মামলার বিচারকাজ শুরুর জন্য আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। দুই মামলায় হাজিরা দিতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে পৌঁছান খালেদা জিয়া। কিন্তু গত এক বছরে মৃত্যুবরণ করা আইনজীবীদের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হওয়ায় আদালতের কার্যক্রম দুপুর ২টার দিকে শুরু হয়। ফলে এই দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা সময় আদালতের এজলাসে বসে সময় কাটাতে হয় বিএনপির প্রধানকে। এদিকে এদিন আসামি ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে তার আইনজীবী আহসান উল্লাহ আংশিক যুক্তি উপস্থাপন করেন। বুধবারও এ আইনজীবী তার পক্ষে পঞ্চম দিনের যুক্তি উপস্থাপন করবেন। এর আগে মঙ্গলবার বকশীবাজারস্থ অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পরে মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিত হন। বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই আদালতে পৌঁছালেও নিম্ন আদালতে এদিন আইনজীবীদের মৃত্যুর বিষয়ে ডেথ রেফারেন্স থাকায় বেলা ২টায় বিচারক এজলাসে উঠলে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন আসামি শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে তার আইনজীবী আহসান উল্লাহ আদালতে দেওয়া সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরা পর্যালোচনা করে অসঙ্গতি আদালতে তুলে ধরেন। বেলা ৩টা পর্যন্ত ওই আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপনের পর বুধবার পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন মুলতবির আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এর পর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আসামি খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বুধবার মৃত্যুবার্ষিকী উল্লেখ করে ওইদিন যুক্তি উপস্থাপন মুলতবির আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক বলেন, আপনাদের (খালেদা জিয়া) জামিন বুধবার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিলাম। আপনাদের না এলেও চলবে। তবে অন্যান্য আসামিদের পক্ষে মামলার কার্যক্রম চলবে। তবে বুধবার দুই মামলায় হাজিরা দিতে খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন বলে মঙ্গলবার বিকেলে নিশ্চিত করেন সানাউল্লাহ মিয়া। গত ১৬ জানুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। তবে তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়নি। গত ২০, ২১, ২৬, ২৭, ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩, ৪, ১০ ও ১১ জানুয়ারি অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর দুদকের দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে খালেদা জিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ড দাবি করেন। প্রসঙ্গত, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এছাড়া ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মামলাটিতে বিএনপি নেতা সচিব হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি। দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জানুয়ারি ২০১৮/মামুন খান/মুশফিক