আইন ও অপরাধ

বিজিএমইএকে মুচলেকা দিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আদালতের আদেশের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও হাতিরঝিলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবনটি ভাঙতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ। আদালত বিজিএমইএর আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ভবন কতদিনের মধ্যে ভাঙবেন সে বিষয়ে মুচলেকা দিতে হবে। অন্যথায় কোনো সময় আবেদন গ্রহণ করা হবে না। বার বার সময় আবেদন করেন। এতে আমাদেরই লজ্জা লাগে। মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। এর আগে গত রোববার আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন একই বেঞ্চ। আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মঞ্জিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে আদালত বলেন, সময় আবেদনের বিষয়ে মুচলেকা দেওয়ার পরেই আদেশ দেওয়া হবে। শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কেন রাজউক এখন পর‌্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি এবার সরকার থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। এ পর‌্যায়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ দাঁড়িয়ে বলেন, রাজউক ভবন ভাঙার জন্য প্রস্তুত। তখন আদালত বলেন, অনেক ভবন রাতারাতি ভাঙা হয়েছে। তাদেরকে তো সময় দেওয়া হয়নি। গোলাপ শাহ মাজারের ওখানে সড়ক করা হয়েছে। তখন কি তাদের সরতে সময় দেওয়া হয়েছিলো। এখানে সময় দেওয়া আনফেয়ার। এভাবে সময় দিলে আদালতের আর কোনো অর্ডার এক্সিকিউট হবে না। মুচলেকার বিষয়ে বিজিএমইএ’র আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিজিএমইএকে আন্ডারটেকেনের বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি আগামীকালের মধ্যে তা দিতে পারব। প্রসঙ্গত, গত ৫ মার্চ বহুতল ভবনটি ভাঙতে আরো এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ৮ এপ্রিল বিজিএমইএর বহুতল ভবনটি ভাঙতে সাত মাস সময় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদেশে আদালত বলেছিলেন, এটাই শেষ সুযোগ। আর সময় দেওয়া হবে না। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভবন ভাঙতে আদালতের দেওয়া নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই সময় চেয়ে আবেদন করেন বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ৫ মার্চ আপিল বিভাগ বিজিএমইএ ভবন অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) করা আবেদন খারিজ করে দেন। তখন ভবন ভাঙতে কত দিন সময় লাগবে, তা জানিয়ে আবেদন করতে বলেন। বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ভবন সরাতে তিন বছর সময় চেয়ে আবেদন করে। ১২ মার্চ আপিল বিভাগ আবেদন নিষ্পত্তি করে ছয় মাস সময় দেন ভবন সরাতে। ২০১৬ সালের ২ জুন বিজিএমইএর করা লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে যায় আপিল বিভাগে। ওই বছরের ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পূর্ব পাশে অবস্থিত বিজিএমইএর ১৬ তলা ভবনটি অবিলম্বে সংগঠনের নিজ খরচায় ভেঙে ফেলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে ৮ ডিসেম্বর রিভিউ আবেদন করে বিজিএমইএ। এর আগে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে বিজিএমইএ ভবন একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। এই লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘বেগুনবাড়ি খাল’ ও ‘হাতিরঝিল’ জলাভূমিতে অবস্থিত ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ নামের ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ ক্ষেত্রে ভবন ভাঙার খরচ আবেদনকারীর (বিজিএমইএ) কাছ থেকে আদায় করবে তারা।

       

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মার্চ ২০১৮/মেহেদী/ইভা/এনএ