আইন ও অপরাধ

দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ : এক বছরেও শেষ হয়নি বিচার

মামুন খান : রাজধানীর বনানীতে দ্য রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এক বছর পূর্ণ হলেও মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। রোববার আলোচিত এ মামলার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এদিকে বছর পার হলেও বিচারের আশায় দিন কাটাচ্ছেন বাদীপক্ষ। গত বছরের ১৩ জুলাই আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মামলাটিতে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে দুই আসামি জামিন পেয়েছেন। আর মামলার চার্জশিটভূক্ত ৪৭ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ১৭ মে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে। ঢাকার দুই নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বিচার কাজ চলছে। তবে সম্প্রতি সরকারের গেজেট অনুসারে অধিক্ষেত্রে পরিবর্তন হওয়ায় আগামীতে মামলাটি ঢাকার সাত নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য স্থানান্তর হবে। আর নতুন আদালতে সরকারি কৌঁসুলি এখনো নিয়োগ না হওয়ার মামলার বিচার বিলম্বিত হতে পারে বলে মনে করছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী । বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এ মামলায় বাদীসহ হোটেলের কর্মচারীরা সাক্ষী হয়েছে। হোটেলের কর্মচারীরা আদালতে বলেছেন, যে তারা (দুই ছাত্রী ও পাঁচ আসামি) হোটেলের গেস্ট ছিলেন। এ ছাড়া মামলার আসামিরাও আদালতের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। এ মামলার বিচারের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। মামলার বাদীর মধ্যে একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। অপর ভিকটিমের পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা শেষ হলেই সেও আদালতে সাক্ষী দেবে। তিনি বলেন, চলতি বছরের ৫ এপ্রিল সরকার গ্যাজেট প্রকাশ করে রাজধানীর থানাগুলোর অধিক্ষেত্রে পরিবর্তন করেছে। সে অনুসারে এ মামলাটির বিচার কার্যক্রম আগামীতে ঢাকার সাত নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে চলবে। তবে ওই ট্রাইব্যুনালের নির্ধারিত কোনো এজলাস নেই। এমনকি পাবলিক প্রসিকিউটরও (সরকারি কৌঁসুলি) পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় মামলার পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত বছরের ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তার বান্ধবী ও বন্ধুকে আটকে রাখে। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে একটি কক্ষে নিয়ে যায় আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ ও তার বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করে। আসামি সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তার মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়। এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ওই দুই ছাত্রী সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান। সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী তাদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডে রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যায়। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তার বান্ধবী জানতেন না যে সেখানে পার্টি হবে। তাদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে। সেখানে যাওয়ার পর তারা কোনো ভদ্রলোককে দেখেননি। সেখানে আরো দুই তরুণী ছিল। বাদী ও তার বান্ধবী দেখেন সাফাত ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় বাদীর বন্ধু ও আরেক বান্ধবী ছাদে আসেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় তারা চলে যেতে চান। এই সময় আসামিরা তাদের গাড়ির চাবি বাদীর বন্ধু শাহরিয়ারের কাছ থেকে নিয়ে নেন। বাদীকে খুব মারধর করা হয়। ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিও ধারণ করতে বলেন। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন। এরপর বাদী ও বান্ধবীর বাসায় রহমত আলীকে পাঠানো হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তারা এতে ভয় পান। লোকলজ্জা এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে পরে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে তারা মামলার সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়। এরপর গত বছরের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ এবং অপর আসামি সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ওই আইনের ৩০ ধারায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়। এরপর গত ১৩ জুলাই আদালত আসামিদের বিরদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। মামলাটিতে আসামিদের মধ্যে রহমত আলী ছাড়া অপর আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সাক্ষ্য গ্রহণকালে কারাগার থেকে মামলাটিতে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম কারাগারে আছেন। সাফাত আহমেদের গাড়ির চালক বিল্লাল হোসেন এবং দেহরক্ষী রহমত আলী জামিনে রয়েছেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ মে ২০১৮/মামুন খান/ইভা