আইন ও অপরাধ

একাত্তরে রণদা প্রসাদ হত্যা: রায় যে কোন দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা হত্যায় অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলার রায় যে কোন দিন ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল। বুধবার উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যর বেঞ্চ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামাণ রাখেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম। এর আগে গত বছরের ২৮ মার্চ মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি এই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ  আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। রণদা প্রসাদ সাহা হত্যায় অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ আনা হয়। গত বছর ২ নভেম্বর টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে যুদ্ধাপরাধের তিনটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান, জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক। হান্নান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামি মাহবুবুর রহমানের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। আসামি মাহবুবুর রাহমান ও তার ভাই আব্দুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসামি এক সময় জামায়াতে ইসলামির সমর্থক ছিলেন। কিন্তু নির্দলীয়ভাবে তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন উদ্বৃত করে হান্নান খান বলেন, ‘আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় হানা দেয়। তারা রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ ৭ জনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে সবাইকে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষা নদীতে ফেলে দেয়। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি।   মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি টাঙাইলের মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ এলাকায় অপরাধ সংঘটন করে। তদন্তে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ আনা হয়। রণদা প্রসাদ সাহার পৈত্রিক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা। থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। সে বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যান্যদের ধরে নিয়ে যায় আসামি মাহবুবুর রহমান ও তার সহযোগীরা।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৯/মেহেদী/শাহনেওয়াজ