আইন ও অপরাধ

‘হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসীরা সেনাসদস্যদের গুলি করে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে সেনা সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে একথা বলেন এপিবিএন- এর কনস্টেবল মো. বাদশা। এদিন বাদশা ছাড়াও আরো তিন পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। এরা হলেন, গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ক্যান্টনমেন্ট জোন) মোহাম্মদ সাহেদ মিয়া, বাড্ডা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আবু তাহের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আগামী ২৫ জুন পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন। এ নিয়ে এই মামলায় ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। বাদশা বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জুলাই এসআই নাজিম আমাকে ফোন দিয়ে হলি আর্টিজানে হামলার বিষয়ে জানায়। রাত ১২টায় সেখানে গিয়ে লেকের পাশে অবস্থান করি। এরপর ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি হলি আর্টিজানের ভিতরে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে রেখেছে সন্ত্রাসীরা। এরপর এসপি আব্দুল্লাহর সাথে কথা হয়। তিনি আমাকে বলেন, সন্ত্রাসীরা বের হলে তাদেরকে গুলি করতে। সারা রাত সেখানে অবস্থান করি। সকালে সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এসময় সেনা সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে।’ সাহেদ মিয়া বলেন, ‘হামলার খবর শুনে সেখানে যাই। রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকেও গ্রেনেড হামলা ও গোলাগুলি হয়। এতে ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন আহত হয়। তাদেরকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। সারা রাত সেখানে অবস্থান করি। সারারাত গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরে সকালে সেনাবাহিনী অভিযান চালায়।’ আবু তাহের মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘হামলার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে অবস্থান করি। সন্ত্রাসীরা গুলি ও গ্রেনেড হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন আহত হয়। সকালে সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। পরে হলি আর্টিজানের ভিতরে গিয়ে দেশি-বিদেশি ২০ জনের ও পাঁচ সন্ত্রাসীর লাশ পড়ে থাকতে দেখি। সাক্ষ্য গ্রহণকালে আসামি মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন, শফিকুল ইসলাম ওরফে খালেদ, হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী ও হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জুন ২০১৯/মামুন খান/শাহনেওয়াজ