নিজস্ব প্রতিবেদক : তথ্য গোপন করে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে রিট দায়ের করায় রিটকারী ড. কাজী ইরতেজা হাসানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ জুলাই তাকে স্বশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বুধবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার। পরে আল আমিন সরকার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থটি প্রকাশের পরপরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া এই পদক্ষেপ গোপন করে ড. কাজী ইরতেজা হাসান রিটটি দায়ের করেন। আজ বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীরা আদালতের কাছে তুলে ধরলে হাইকোর্ট বিষয়টির ব্যাখ্যা দেওয়ার কাজী ইরতেজা হাসানকে তলব করেন।
আজ ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনায় জারি করা রুলের রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারিত ছিল। তথ্য গোপণের বিষয়টি নজরে আসায় আজ রায় ঘোষণা করেননি আদালত। বইটি নিয়ে সমালোচনা হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দুটি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দুটি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করার পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি প্রকাশনার পরপরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিদৃষ্ট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন। এর মধ্যে ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর গত বছরের ২ অক্টোবর রুল জারি করে এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। ...গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি- এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে।’ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘গ্রন্থটিতে তদানীন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল এবং সেটি সবার ভুল মর্মে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেন। এর পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গ্রন্থটির সম্পাদককে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। ১২ মার্চ মঙ্গলবার এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেছিলেন, আদালত প্রকাশিত ওই বইগুলো কী করা হয়েছে, তা হলফনামা আকারে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া, পরবর্তী তারিখ রেখেছেন ৯ এপ্রিল। আর ইতিহাস বিকৃতির দায় স্বীকার করে শুভঙ্কর সাহা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুন ২০১৯/মেহেদী/রফিক