আইন ও অপরাধ

তাবেলা সিজার হত্যা : চার বছরেও শেষ হয়নি বিচার

রাজধানীর গুলশানে ইতালিয়ান তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচার কার্যক্রম চার বছরেও শেষ হয়নি। মূলত সাক্ষী না আসায় এতদিন মামলাটির বিচার শেষ হয়নি। তবে এ বছর মামলাটির বিচার শেষ হবে এমন আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

২০১৫ সালের এই দিনে গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিওবিডির কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। ওই দিনই তার সহযোগী আইসিসিও এর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে বিচারাধীন। বর্তমানে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর মামলাটির তারিখ ধার্য ছিল। ওই দিন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর সাব্বির রহমানকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। কিন্তু জেরা শেষ না হওয়ায় অবশিষ্ট জেরা এবং পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৯ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল জানান, তাবেলা সিজার হত্যা মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে এ মামলায় প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার পর মামলার বাদী ইতালিয়ান ও চার্জশিট দাখিলকারী তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেয়া হবে। আর এর মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্তি ঘটবে। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থন ও বিচারের সর্বশেষ ধাপ যুক্তিতর্কের পর রায় ঘোষণা করতে পারবেন আদালত।

তিনি আরো বলেন, ‘মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যে দিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন আদালত। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। এ মামলার সকল দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে জগিং করার সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইতালিয়ান ও নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিওবিডির কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। তাবেলা সিজার নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আইসিসিও কো-অপারেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৬ সালের ২২ জুন ডিবি পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এতে বিএনপি নেতা এমএ কাইয়ুমসহ (কাইয়ুম কমিশনার) সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ‌্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে এই পরিকল্পনা করা হয়।

চার্জশিটে আরো বলা হয়, আসামি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাবেলা সিজারকে হত্যা করে। মতিনের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটর সাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউজের সীমানা প্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ গুলি করে তাবেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।

২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। আর ১১ নভেম্বর মামলায় প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। মামলাটিতে এখন পর্যন্ত চার্জশিটভূক্ত ৭০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

মামলার অপর আসামিরা হলেন-কাইয়ুম কমিশনা, তার ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও মো. সোহেল ওরফে ভাঙ্গারী সোহেল। আসামিদের মধ্যে কাইয়ুম কমিশনার ও ভাঙ্গারী সোহেল এখনও পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের মধ্যে আবদুল মতিন ছাড়া বাকি চার আসামিই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলাটিতে কাইয়ুম কমিশনার ও সোহেল পলাতক। মতিন জামিনে এবং বাকি চার আসামি কারাগারে রয়েছেন।

 

ঢাকা/মামুন খান/হাকিম মাহি