আইন ও অপরাধ

তিতাসের মৃত্যুতে দায় এড়াতে পারেন না যুগ্ম সচিব

মাদারীপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে ভিআইপির অপেক্ষায় ফেরি আটকে রাখায় মৃত‌্যু হয় স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের। এঘটনায় ভিআইপি যুগ্মসচিব আব্দুস সবুর মন্ডল দায় এড়াতে পারেন না বলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বুধবার প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে এসেছে। প্রতিবেদনে কাঁঠালবাড়ি এক নম্বর ফেরিঘাটের চার কর্মকর্তা-কর্মচারিকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। তবে এর আগে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের দাখিল করা প্রতিবেদনে যুগ্ম সচিবকে ‘নির্দোষ’ হিসেবে দেখালেও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মন্ডল দায় এড়াতে পারে না।

যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মন্ডলের বিষয়ে বলা হয়েছে, ফেরি আটকিয়ে রাখা এবং ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগী থাকার কথাও তিনি জানতেন না। একারণে তাকে সরাসরি দায়ী করা যায় না। তবে তিনি ঘাট ব্যবস্থাপককে দীর্ঘক্ষণ আগে থেকেই পারাপারের জন্য বার্তা দিয়ে তার সঙ্গে বার বার ফোনালাপের মাধ্যমে একটা দায়ভার সৃষ্টি করেছিলেন। সর্বোপরি নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে বিলম্বে ফেরি ঘাটে উপস্থিত হওয়া এবং তার জন্যই ফেরি অপেক্ষমান রাখায় এক্ষেত্রে তারও দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাই তিনি এক্ষেত্রে দায়ভার এড়াতে পারেন না।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।

বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা এড়াতে প্রতিবেদনে ৭ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির সভাপতি সঞ্জয় কুমার বণিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। 

প্রতিবেদনে যে চারজনকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে তারা হলেন- ঘাট ম্যানেজার মো. সালাম হোসেন, প্রান্তিক সহকারি মো. খোকন মিয়া, উচ্চমান সহকারি ও গ্রুপ প্রধান ফিরোজ আলম এবং ইনল্যান্ড মাস্টার সামছুল আলম।

গত ২৫ জুলাই রাতে সরকারের এ টু আই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মন্ডলের গাড়ির অপেক্ষায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি এক নম্বর ফেরিঘাটে প্রায় দুই ঘণ্টা ‘কুমিল্লা ফেরি’ বসিয়ে রাখা হয়। ফেরিঘাটে আটকে পড়া স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পার করার জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েও ফেরি ছাড়া যায়নি। ফলে অ্যাম্ব্যুলেন্সেই মৃত্যু হয় তিতাসের।

এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে তিতাসের পরিবারকে তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন লিমনের করা এক রিট আবেদনে গত ৩১ জুলাই বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে ঘটনা তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। ঢাকা/মেহেদী/সনি