আইন ও অপরাধ

১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে ওসি মোয়াজ্জেমের

ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ২৮ নভেম্বর।

বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ তারিখ ধার্য করেন।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে এ  মামলা হয়।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে মোয়াজ্জেম হোসেনের সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম।

এ সম্পর্কে ওই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বলেন, মামলায় ওসির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। যেখানে ২৬ ধারায় অনুমতি ছাড়া কারো পরিচিতি সংগ্রহ, দখলে রাখা ও সরবরাহের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

২৯ ধারায় ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচারের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

৩১ ধারায় ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসের মাধ্যমে কোনো কিছু প্রকাশের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির উপক্রম হলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

তাই মামলায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামির সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারে ট্রাইব্যুনাল। আবার কারাদণ্ড না দিয়ে ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডও করতে পারে। ট্রাইব্যুনাল ১৫ বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডও করতে পারে। তবে সর্বনিম্ন দণ্ডের কথা আইনে নেই।

গত ১৫ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। রীমা সুলতানা মামলাটি তদন্ত করে ২৩ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর ১৬ জুন মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরদিন তাকে একই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন একই বিচারক। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। গত ১৭ জুলাই মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

উল্লেখ্য, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ‌্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা তুলে নেয়ার জন্য গত ৬ এপ্রিল নুসরাতকে চাপ প্রয়োগ করে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় অধ্যক্ষের সহযোগীরা।

টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যায় নুসরাত। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় গত ২৪ অক্টোবর ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন ফেনীর আদালত। ঢাকা/মামুন খান/রফিক