আইন ও অপরাধ

রুম্পার কারণে ভার্সিটি ছেড়েছে সৈকত : আইনজীবী

রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার কারণে সৈকত স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন বলে দাবি করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী।

রোববার রুম্পা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার কথিত প্রেমিক সৈকতের রিমান্ড শুনানিতে এ দাবি করেন তার আইনজীবী আব্দুল হামিদ ভূইয়া।

আজ মামলাটিতে ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত শুনানি শেষে সৈকতের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শাহ্ মো. আকতারুজ্জামান ইলিয়াস আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। সৈকতকে দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। এরপর রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকতা মাহমুদুর রহমান ডিবি পুলিশের রিমান্ড আবেদন পড়ে শোনান।

তিনি বলেন, ‘রুম্পা একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। এ আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদের সম্পর্ক ছিল। পরে তাকে হত্যা করেছে। কেন হত‌্যা করেছে তা জানার জন্য ডিবি পুলিশ রিমান্ড আবেদন করেছে। রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’

রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, ‘আসামি এবং ভিকটিম স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সেখানে পড়াশোনার সময় তাদের মধ‌্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। ঘটনার দিন তাদের মনমালিন্য হয়। আসামি সম্পর্ক না রাখার কথা বলে। বিশ্ববিদ‌্যালয়ের বাইরের রাস্তায় তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে হত্যা করে ফেলে দিয়েছে। কোন কৌশলে হত্যা, ঘটনার মোটিভ, সহযোগী আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তিনি।

আসামিপক্ষে  আইনজীবী আব্দুল হামিদ ভূইয়া রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের প্রার্থনা করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘এজাহারে আসামির নাম নাই। ঘটনার তিন দিন পর ডিবি পুলিশ ফোন দেয়। আসামির মধ্যে কোনো ভয় ছিল না। নির্ভয়ে তিনি সেখানে যান। পরে তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।’

আইনজীবী বলেন, ‘রুম্পার উত্যক্ত্যের কারণে সৈকত ভার্সিটি ত্যাগ করেছে। অন্যত্র পড়াশোনা করছে। গত দুই সপ্তাহে তার বাবা ও এক চাচা মারা গেছে। এমন অবস্থায় হত্যা করার মানসিকতা অবশ্যই থাকার কথা না। ভিকটিমকে হত্যা করা হয়েছে না সে আত্মহত্যা করেছে বিষয়টি ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। হত্যা না আত্মহত্যা বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি।’

সৈকত ভিকটিমের কারণে ভার্সিটি ত্যাগ করেছে আসামিপক্ষের আইনজীবীর এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ বলেন, ‘যদি আসামিকে ভিকটিমের কারণে ভার্সিটি ত্যাগ করতে হয় তাহলে তার মধ্যে একটা ক্ষোভ ছিল। আর এ ক্ষোভ থেকে আসামি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। রুম্পা হত্যার দৃশ্য হৃদয় বিদারক।’ তিনি আসামির রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সৈকতের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

শুনানিকালে সৈকতের মা এবং চাচা শাহিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সৈকতের মাকে অঝরে কাঁদতে দেখা যায়। তার দাবি, সৈকত ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।

প্রসঙ্গত, গত ৪ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার পর রুম্পা রাজধানীর শান্তিবাগের বাসা থেকে বের হন। রাত পৌনে ১১টার দিকে বাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাস্থলে পাশাপাশি তিনটি ভবনের কোনো একটি থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। তবে তাকে কেউ নিচে ফেলে হত্যা করেছে নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন, এখনো তা জানা যায়নি।

শনিবার সন্ধ্যায় খিলগাঁও এলাকা থেকে সৈকতকে আটক করা হয়। তিনি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ বিভাগের ৫৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

 

ঢাকা/মামুন খান/ইভা