আইন ও অপরাধ

সুমনের হাত ধরে অন্ধকার জগতে পাপিয়া

প্রথমে বন্ধু, পরে প্রেমিক; এরপরই সুমন চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ।  আর বিয়ের পরই স্বামী সুমনের হাত ধরে রঙিন জীবন শুরু করেন যুব মহিলা লীগ থেকে সদ্য বহিষ্কার হওয়া সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া।  মূলত বিয়ের পরই স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় তার অন্ধকার জগতের সব কর্মকাণ্ড।

পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে।

পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেওয়া একটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কলেজে পড়ার সময় সুমনের সঙ্গে তার (পাপিয়া) পরিচয় হয়।  ধীরে ধীরে তারা (পাপিয়া-সুমন) ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন।  বন্ধু থেকে একপর্যায়ে সুমনের প্রেমিকা হন পাপিয়া।  যা বিবাহ বন্ধনের মাধ‌্যমে পরিণতি পায়।  মূলত এরপরই সুমনের হাত ধরে রঙিন দুনিয়ার পা দেন পাপিয়া।

সূত্র আরো জানায়, কলেজের সাধারণ ছাত্রী হয়েও সুমনের মাধ্যমে প্রথমে নরসিংদীর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার।  প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় অনেক রাজনৈতিক নেতা পাপিয়াকে তাদের কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেন।  তবে সুমনের হাত ধরে পাপিয়ার উত্থান হলেও একপর্যায়ে প্রভাব-প্রতিপত্তি আর ক্ষমতায় স্বামীকেও ছাড়িয়ে যান পাপিয়া।  যা পাপিয়াকে ঠেলে দেয় বেপরোয়া জীবন বেছে নিতে।

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান সোমবার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পাপিয়া-সুমন দম্পতি ও তাদের সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।  তারা অন্ধকার জীবনের বিভিন্ন কাহিনিও বলছেন।  যার সঙ্গে স্বামী সুমন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্ত্র-মাদক বা তদবিরের বিভিন্ন কাজ পাপিয়া করলেও তার সবকিছুর মূলে ছিল নারীকেন্দ্রিক অনৈতিক কর্মকাণ্ড।  একচেটিয়া অধিপত‌্য বিস্তারে বাংলাদেশে প্রথম অনলাইনভিত্তিক যৌন ব্যবসার প্ল্যাটফর্ম ‘এসকর্ট’ গড়ে তোলেন পাপিয়া।  এটি গড়ে তুলতে রাজনীতিকে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন।  এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুন্দরী তরুণী সরবরাহ করা হতো।   অনৈতিক ব্যবসার অনলাইনভিত্তিক সাইট ‘এসকর্ট’ এখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়।  এসকর্টের সঙ্গে জড়িত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবসায়ী সুন্দরী, তরুণী এবং তাদের খদ্দেরদের নামও বলেছেন পাপিয়া।  তাদের দিয়েই পাঁচতারকামানের হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স‌্যুইট (প্রতিরাতের ভাড়া দুই হাজার ডলারের মতো) ভাড়া করে পাপিয়া অবৈধ বাণিজ্য চালাতেন, বসাতেন ককটেল পার্টি।  সেখানে প্রথমে অতিথিদের নিয়ে যেতেন হোটেলের লবিতে।  পরে লাঞ্চ বা ডিনার শেষে সেখান থেকে নিয়ে যেতেন নির্ধারিত স‌্যুইটে।

র‌্যাবের একটি সূত্র বলছে, রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতে মাঝেমধ্যেই ‘ককটেল পার্টি’র আয়োজন করতেন পাপিয়া।  এসব পার্টিতে উপস্থিত হতেন সমাজের অভিজাত শ্রেণির লোকজন।  মদের পাশাপাশি পার্টিতে উপস্থিত থাকতো এসকর্ট গ্রুপের উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।  পান করানো হতে নেশাজাতীয় দ্রব‌্য।  নেশায় টালমাটাল আমন্ত্রিত অতিথিদের একপর্যায়ে কৌশলে ওই তরুণীদের নিয়ে ধারণ করা হতো অশ্লীল ভিডিও।  আর ওইসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল‌্যাকমেইল করে বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন পাপিয়া।  এমন একজন অতিথিকে ব্ল্যাকমেইল করে ২০ লাখ টাকা আদায়ের পরই পাপিয়ার ওপর নজরদারি শুরু করে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল।

হোটেল ওয়েস্টিনের মার্কেটিং কমিউনিকেশন বিভাগের সহকারী পরিচালক সাদমান সালাহউদ্দিনের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না।  পাপিয়া আমাদের কাস্টমার, এতটুকু বলতে পারি।’

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া, তার স্বামী মতিসহ চারজনকে আটক করে র‌্যাব।  তারা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে সে সময় জানানো হয়।

 

ঢাকা/মাকসুদ/জনি