আইন ও অপরাধ

বিদেশফেরত অনেকেই আত্মগোপনে

বিদেশফেরত অনেক ব্যক্তিকেই খুঁজে পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিজ নিজ ঠিকানায় নেই তারা। পরিবারের লোকজনও কিছু বলতে পারছেন না। সন্দেহ করা হচ্ছে, কোয়ারেন্টাইনে থাকার ভয়ে আত্মগোপনে আছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মাসে ইতালি থেকে দুজন সবুজবাগ থানাধীন মাদারটেক এলাকায় আসেন। ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সোমবার তাদের বাসায় যায় পুলিশ। কিন্তু ওই দুজনকে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় আছেন, তা জানেন না বলে দাবি করছেন পরিবারের সদস্যরা।

এর আগে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানাধীন মিল ব্যারাক এলাকায় একজন প্রবাসীর বাসায় গিয়ে তাকে পায়নি পুলিশ। তিনি স্পেন থেকে সম্প্রতি দেশে এসেছেন। তেজগাঁও ও গুলশান থানা পুলিশও এরকম বেশ কয়েকজনকে খুঁজে পায়নি। পরে তাদের বাসার লোকজনকে সতর্ক করে আসে পুলিশ। আশপাশের লোকজনকেও সতর্ক করা হয়।

রাজধানীর একাধিক থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্চ মাসের মঝামাঝি সময়ে প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী দেশে আসেন। তারা বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন চেকপোস্ট দিয়ে প্রবেশ করার সময় নাম-ঠিকানা, এমনকি মোবাইল নম্বরও দেন। সে অনুযায়ী পুলিশ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও খোঁজ নেয়। কিন্তু এদের অনেককেই নিজ ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না। তাদেরকে আটক করার জন্য নয়, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য খোঁজা হচ্ছে। তারা আত্মগোপনে থাকায় শুধু নিজেকেই বিপদগ্রস্ত করছেন না, পরিবার ও অন্যদের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করছেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে অনেক বিদেশফেরত ব্যক্তিকে পাওয়া গেছে। তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন তাদের কী কী নিয়ম মানতে হবে, তাও বলা হয়েছে।

পুলিশের মহাপরিদশর্ক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে পুলিশ জনগণকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়াসহ নানা সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। বিদেশফেরত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিকল্প নেই। প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কেউ যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, বিদেশফেরত সবাই করোনায় আক্রান্ত না হলেও অনেকেই পুলিশি হয়রানি বা হোম কোয়ারেন্টাইনের ভয়ে আত্মগোপনে আছেন। কেউ আত্মীয়দের বাসায় আত্মগোপন করেছেন। কেউ কেউ অন্য জেলায় চলে গেছেন। তারা যেন অবশ্যই স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করেন, এ বিষয়ে তাদের পরিবারকে বলা হয়েছে। এরপরও যদি তারা স্বেচ্ছায় পুলিশের কাজে সহযোগিতা না করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পথে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫৪ জন প্রবাসী দেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। তারা ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। দেশে ফেরার সময় তাদের শরীরে বিশেষ সিল মেরে কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য বলা হচ্ছে। তারপরও তাদের আত্মগোপনে থাকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ও আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ঢাকা/মাকসুদ/রফিক