আইন ও অপরাধ

করোনার দুঃসময়েও থামেনি নারীর প্রতি সহিংসতা

করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়েও নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতন বেড়েছে। প্রায়ই গণমাধ‌্যমে প্রকাশিত হচ্ছে নারী নির্যাতনের ঘটনা।

ভালোবাসা, এরপর বিয়ে। চার মাস আগে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন ফারাবী আহমেদ সবুজ ও ইসরাত জাহান বৃষ্টি। ভালোই চলছিল সংসার। গত ৬ জুন রাতে মোবাইল নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরেরদিন বাসা থেকে বৃষ্টির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

শুধু বৃষ্টি নয়, করোনার এই সময়েও থেমে নেই নৃশংসতা, নির্যাতন। প্রতিনিয়তই ঘটছে এ ধরনের ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেকারত্ব ও হতাশা বাড়ায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, অর্থনৈতিক নির্যাতন, হত্যার মতো ঘটনা।

মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিন মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৮০ জন নারী ও শিশু। বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী, লকডাউনে নারী নির্যাতন বেড়েছে ২০ ভাগ। দেশের ২৭টি জেলায় শুধু এপ্রিলে সহিংসতার শিকার হয়েছে চার হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ শিশু।

মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী সালমা আলী বলেন, মহামারি সময়ে নির্যাতন বেড়ে যায়। কারণ এ সময়তো কেউ সামনে থাকে না। নির্যাতন করলেও কোনও অভিযোগ করা যাবে না, পুলিশ আসবে না, মামলা হবে না, কারাগারে যেতে হবে না। তাছাড়া অন্য সময় তো নারীরা কর্ম করে পরিবারে আর্থিকভাবে কিছু সাহায্যও করতো। কিন্তু এ সময় তারা পুরুষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এজন্য পুরুষরা নারীদের সঙ্গে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে। বিচারধীনতার কারণেই নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, করোনায় মানুষ ঘরবন্দি। তারপর আবার কর্মসংস্থান, পরিবার ও ভবিষ্যতের চিন্তা। এসব চিন্তা সবই নেগেটিভ। নেগেটিভ চিন্তা যখন মানুষের মধ্যে আসে মানুষ স্বাভাবিকভাবে এগ্রেসিভ হয়। নানা ধরনের রূঢ় ব্যবহার করে। তবে এগুলো নিয়ন্ত্রণেরও উপায় আছে। কিন্তু অনেকে বোধহয় সেটা জানেন না, উপযুক্ত পথ কোনটা। অনেক সময় পথ জানলেও তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এসব কারণে মানুষ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। নেগেটিভ চিন্তা না করে প্রবলেম সলিউশনের পথ খুঁজতে হবে।

সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামকর্মী রুখশানা আফরোজ আশা বলেন, নারীদের প্রতি নির্যাতন শুধু লকডাউনে হচ্ছে এরকম না। আমাদের দেশে সব সময় এটা সাধারণ চিত্র হিসেবেই আসে। নির্যাতনের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন আর সবক্ষেত্রে নারীরাই নির্যাতিত। লকডাউনে মানুষের জীবনের অস্থিরতা বেড়েছে, দেশের অর্থনীতির বিপর্যয় ঘটেছে। একটি বড় অংশ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও অস্থিরতা আছে। সবকিছুর প্রভাব ধীরে ধীরে পরিবারের ওপরই পড়ে। বিশেষ করে নারীদের ওপরই।

এক্ষেত্রে প্রতিকার কী জানতে চাইলে রুখশানা আফরোজ আশা বলেন, একটা সমাজে যখন সামাজিক বৈষষ্য চলে, নারী-পুরুষকে এক নজরে দেখা হয় না। তখন সেই সমাজে নারীর ওপর নির্যাতন হবেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে নারী-পুরুষকে সমান মর্যাদা না দিলে এটা চলতেই থাকবে। সমাজে বৈষম্য রেখে নারী নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না। নারীদের লড়াই করেই তাদের অধিকার আদায় করতে হবে। মামুন/সাইফ