আইন ও অপরাধ

মাস্ক দুর্নীতি: দৃষ্টি এড়াতে কাল্পনিক সিন্ডিকেট তৈরি, দাবি মিঠুর

নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করা ও মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য 'মিঠু সিন্ডিকেট' নামে একটি কাল্পনিক জুজু তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন লেক্সিকন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনো ট্রেড লিমিটেডের মালিক মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু।

মাস্ক-পিপিই ক্রয় দুর্নীতির অনুসন্ধানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলে তিনি উপস্থিত না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে এমন দাবি জানান।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) অনুসন্ধান টিম প্রধান ও দুদক পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী বরাবর চিঠিতে নিজের অসুস্থতা ও আমেরিকায় অবস্থানের বিষয়টি জানান মিঠু।

চিঠিতে লেক্সিকন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনো ট্রেড লিমিটেডের মালিক দাবি করেন, আমি পরিবারসহ ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চলে আসি। গত ৫ বছরে গড়ে এক মাসও দেশে অবস্থান করিনি।  কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এবং অসুস্থতাজনিত কারণে আমি হাঁটা-চলায় অপারগ। এজন্য আমার পক্ষে সশরীরে হাজির হয়ে জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। তাই  নিযুক্ত আইনজীবীর সৈয়দ মুহাসিন মো. সালাউদ্দিন কাওসারের মাধ্যমে আমার বক্তব্য দিচ্ছি। পরবর্তী সময়ে কোনো যোগাযোগের আবশ্যকতা দেখা দিলে আমার আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি।

তিনি বলেন, আমার মালিকানাধীন লেক্সিকন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনো ট্রেড লিমিটেড কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি কোনো দিনই আমদানি অথবা সরবরাহ করেনি। যদি কেউ দাবি করে থাকে তার বিপরীতে কার্যাদেশ, চুক্তি অথবা অন্যান্য প্রমাণ দাবি করছি। তাই প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি করে দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।

মিঠু দাবি করেন, নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করার উদ্দেশে এবং দেশের মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য মিডিয়া এবং সরকারি বিভিন্ন অফিস মিঠু সিন্ডিকেট নামের একটি কাল্পনিক জুজু তৈরি করা হয়েছে। এতে কোভিডকালীন যারা নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করে বেশি মুনাফা করেছেন তারা বেঁচে যাচ্ছে। আর দেশের মানুষকে বোঝানো হচ্ছে সব ‘মিঠু সিন্ডিকেট’ এর কাজ। এ যেন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাঁড়ে চাপানোর প্রচেষ্টা। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে কোনো কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেছে, যার বিস্তারিত তথ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে। দুদক সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তথ্য উদঘাটন করলে দেশবাসী প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জানবে।

এদিকে মাস্ক-পিপিই ক্রয় দুর্নীতির অনুসন্ধানে মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেডের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুদক।  সংস্থাটির পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে একটি টিম। টিমের অপর সদস্যগুলো হলো- উপপরিচালক নুরুল হুদা, সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও আতাউর রহমান।

এর আগে বুধবার মেসার্স জেএমআই হাসপাতাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমেটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক এবং তমা কনস্ট্রাকশনের সমন্বয়কারী (মেডিক্যাল টিম) মতিউর রহমানকে একই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ জিজ্ঞাসাবাদ। ঢাকা/এম এ রহমান/এসএম