আইন ও অপরাধ

করোনার ধাক্কা সামলাতে প্রণোদনা চায় বিআরটিসি-সিভিল এভিয়েশন

জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (সিএএ) করোনার ধাক্কা সামলাতে সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনায় চায়। সংস্থা দুটি বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা না পেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা কঠিন হবে। এই বিষয়ে উভয় সংস্থার পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

উভয় সংস্থা থেকে ১১ আগস্ট (মঙ্গলবার) অর্থবিভাগে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সীমিত আকারে পরিশোধ করলেও পরবর্তী সময়ে তাদের আয় আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এর ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য তারা সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছে।

জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনার কারণে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এতে কার্যত সব সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে উভয় সংস্থার তহবিল প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। অর্থ বিভাগ ইতোমধ্যে বিআরটিসির কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য ৪ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে।’

বিআরটিসি আয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সংস্থাটির আয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ কোটি টাকা। যা আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম হয়েছিল। এর আগের বছর তাদের আয় হয়েছিল ছিল ১০ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান এহসান এলাহী বলেন, ‘সরকার যখন যাত্রী পরিবহন সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেবে, তখন বিআরটিসি লোকসান থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। তখন আর কোনো সহায়তার প্রয়োজন হবে না। নিজেদের আয় থেকেই সংস্থার ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হবে। তবে, ধাক্কাটা কাটতে কিছুটা সময় লাগবে।’

এদিকে, করোনার কারণে দেশের সব বিমানবন্দর থেকে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির আয় অনেক কমেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসের আয়ের বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে, প্রথম দুই মাসে কিছু আয় কমেছে। এরপর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আয় ৪৬ শতাংশ থেকে ৮৮ শতাংশে কমেছে।

বেসমারিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী—জুন পর্যন্ত সংস্থার আয় হয়েছে মাত্র ৩৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। গত বছর একই সময়ে আয় হয়েছিল ১৩৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

সিভিল এভিয়েশন অথরিটির আয়ের দুটি অংশ রয়েছে।  একটি অ্যারোনটিক‌্যাল আয়, অন‌্যটি নন-অ্যারোনটিক‌্যাল আয়। অ্যারোনটিকাল আয়ের মধ‌্যে রয়েছে—আকাশসীমা চার্জ, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের চার্জ ইত‌্যাদি। নন-অ‌্যারোনটিক‌্যাল আয়ের মধ‌্যে রয়েছে—বিমানবন্দরের ভেতরের দোকান ভাড়া, বিভিন্ন স্টল, লাউঞ্জ, পুকুর, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা, খামার জমি ভাড়া ইত‌্যাদি।  

এছাড়া রয়েছে ইজারা থেকে আয়। করোনার কারণে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২২ জুলাই সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে ইজারাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোকে ইজারা মূল্যের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ইজারার অর্থ মওকুফ করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। লকডাউনের কারণে বিমানবন্দরগুলোয় ইজারা দেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয় অনেক কমে গেছে। এই লোকসান পুষিয়ে নিতে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি তাদের ইজারার ২৫ শতাংশ অর্থ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি অর্থ বিভাগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘গত ছয় মাস ধরে আয় অনেক কমেছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বার্ষিক আয় হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকা। অন্যান্য বিমানবন্দর থেকে আরও ২০ কোটি টাকা আয় হয়।’ করোনায় এই আয়ে ধস নেমেছে বলেও তিনি মন্তব‌্য করেন।