আইন ও অপরাধ

ধর্ষণ রোধে মৃত‌্যুদণ্ডের বিধান চান বিশেষজ্ঞরা

ধর্ষণ রোধে দ্রুত কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অপরাধবিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন, কঠিন সাজা নিশ্চিতের মাধ্যমে অপরাধীদের মনে ভয় ঢোকাতে পারলেই ধর্ষণের ঘটনা কমবে। এজন‌্য প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের সংশোধন করে মৃত‌্যুদণ্ডের বিধান যুক্ত করারও পরামর্শ দেন তারা।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর ধর্ষণের মামলার নিষ্পত্তি হয় চার ভাগেরও কম। দীর্ঘ সময় ধরে চলা বিচার প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ আসামিই খালাস পেয়ে যায়। আসামির সাজা না হওয়ার জন‌্য বিচারের দীর্ঘসূত্রিতাকেও তারা দায়ী করছেন।

বেসরকারি সংস্থা নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক রওশন আরা বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার পর বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে থানা, হাসপাতাল ও আদালত—এই তিন জায়গা জড়িত। সাধারণত এই তিন জায়গায় নারীরা যান। দেখতে হবে, এসব জায়গায় তারা কী ধরনের আচরণ পান।

মানবাধিকার-কর্মী নীনা গোস্বামী বলেন, ‘ধর্ষণের মামলায় চূড়ান্ত সাজা হয় হাতেগোনা। ধর্ষণের বিচার পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। অনেক সময় ধর্ষকের সাজা না হওয়ার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত, আদালতে তথ্য-প্রমাণ ঠিকমতো উপস্থাপন না করা। দ্বিতীয়ত, মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে পরিবারের অনাগ্রহ।’

দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজ থেকে এই অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ সমাজের দেহে ক্যান্সারের মতো রোগ।  এই ধরনের অপরাধের বিচার না হলে অপরাধীরা সাহস পায়।’

নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আইন সংস্কার করতে হবে।  ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।’

অপরাধীদের কঠোর সাজা না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন মানবাধিকার-কর্মী খুশি কবির। তার মতে, ‘দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। পুলিশের দায়িত্বহীনতাও এ ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী। ভালো-মন্দ বিচারের মানসিকতা আমরা হারিয়ে ফেলছি। এক্ষেত্রে সরকার ও সাধারণ মানুষকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, সমাজের চারপাশে কী শিক্ষা আমরা পাচ্ছি—সেগুলো দেখতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমানের মতে, ‘ধর্ষণের মতো ঘটনা মূলত অপরাধীর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, পারিবারিক শিক্ষার ওপর নির্ভর করে। যতদিন অপরাধীদের কঠোর শাস্তি হবে না, ততদিন ধর্ষণ বন্ধ হবে না।’

খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘‘সেক্সুয়‌্যাল এডুকেশন’’ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মূল্যবোধের পরিবর্তন আনতে হবে।’ এছাড়া, ধর্ষকদের সামাজিকভাবে বয়কট করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।