আইন ও অপরাধ

এএসপি হত্যা: মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালের রেজিস্ট্রার গ্রেপ্তার

রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপন হত্যার মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সকালে আদাবর থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ এ তথ‌্য নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, আব্দুল্লাহ আল মামুন সরকারি হাসপাতালের রেজিস্ট্রার হলেও কমিশনের আশায় বেসরকারি হাসপাতালে রোগী পাঠাতেন।

ডিসি হারুন অর রশিদ বলেছেন, ‘সিনিয়র এএসপি শিপন হত্যার মামলার এফআইআরভুক্ত ১৫ জনের মধ্যে আমরা ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের মধ্যে চারজন ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এএসপি শিপন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, কারা ইন্ধন দিয়েছে, কাদের যোগসাজশে শিপন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, কারা সরকারি মানসিক হাসপাতাল থেকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে এএসপি শিপনকে নিয়ে গেছে—সবকিছু উঠে এসেছে ওই চারজনের জবানবন্দিতে। তাদের জবানবন্দিতে উঠে আসে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম। আজ সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার পথে তাকে গ্রেপ্তার করে আদাবর থানা পুলিশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আব্দুল্লাহ আল মামুনই প্রথম ব্যক্তি যার অধীনে সিনিয়র এএসপি শিপন মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি শিপনের চিকিৎসার উদ্যোগ না নিয়ে বসিয়ে রাখেন। পরে একটা বেডে তাকে শুইয়ে দিয়ে ইনজেকশন পুশ করেন। এএসপি শিপন ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তিনি ফোন করেন মাইন্ড এইড হাসপাতালে। এএসপি শিপনকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলেন ডা. মামুন।’

আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে মাইন্ড হাসপাতালের ম্যানেজার উল্লেখ বলেছেন, ‘সরকারি মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনই তাকে প্রথমে ফোন করেন বলেন, আমি একটা রোগী পাঠাচ্ছি। এএসপি শিপন মাইন্ড এইড হাসপাতালে মারধরের শিকার হয়ে মারা যান।’

গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে থাকার কথা থাকলেও তিনি মূলত বেসরকারি তিনটি হাসপাতালে খণ্ডকালীন চাকরি করেন। এসব হাসপাতাল হলো—টাঙ্গাইলের ঢাকা ক্লিনিক, এইড ওয়েল ও আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতাল।

ডিসি হারুন বলেন, ‘আদাবরের ওই হাসপাতাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নেয়নি। এমন একটি হাসপাতালে কীভাবে চিকিৎসা করান, তা জানতে চাইলে ডা. মামুন পুলিশকে জানান, অন্যরা যেভাবে করেন, তিনিও সেভাবে করেন। সরকারি হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ও চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী স্থানান্তর করলেন, এমন প্রশ্নের কোনো জবাব তিনি পুলিশকে দিতে পারেননি।’

তিনি বলেন, ‘সিনিয়র এএসপি শিপনের মৃত‌্যুর সংবাদ পেয়ে ডা. মামুন ওই হাসপাতালে ছুটে যান। দায় এড়ানোর জন্য মৃত্যুর সংবাদ জেনেও এএসপি শিপনকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠান। আমরা জেনেছি, মাইন্ড এইড হাসপাতালে দালাল রোগী পাঠালে কমিশন পান ১০ শতাংশ। তবে ডা. মামুন পান ৩০ শতাংশ। ডা. মামুনের এ ধরনের অপতৎপরতা চিকিৎসার নামে প্রতারণা। শিপন হত্যাকাণ্ডের দায় কোনোভাবে এড়াতে পারেন না ডা. মামুন। এজন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’