পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রী হাসি খাতুনকে খুন করেন স্বামী রুবেল। আর ভবিষ্যতে ছেলে বখাটে হয়ে যাবে এ চিন্তায় নিরবকেও শেষ করে দেন তিনি। আদালতে দেওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছেন রুবেল।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) এ কথা জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার এসআই শাহ সিরাজ উদ্দিন।
তিনি বলেন, গত ২৩ মার্চ রাত ২টা থেকে ভোর ৬ টার মধ্যে যেকোনো সময় হাসি খাতুন এবং ছেলে নিরবকে যেকোনো সময় হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে কড়াইল বস্তির পিছনে একটি ঝিলে ফেলে কৌশলে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় হাসি খাতুনের বাবার দায়ের করা মামলায় রুবেলকে গত ৩ এপ্রিল ভোর ৫টার দিকে তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া কাঁচামালের আড়তের সামনের রাস্তা থেকে র্যাব-১ আটক করে।
শাহ সিরাজ উদ্দিন বলেন, ৪ এপ্রিল রুবেল আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। সে জানায়, হাসি খাতুন অন্য লোকের সঙ্গে পরকীয়া করতো। এজন্য তাকে খুন করেছে। আর ছেলে নিরব যদি তার মায়ের সাথে কড়াইল বস্তিতে থাকে তাহলে ছেলেকে মানুষ করতে পারবে না। আবার নিজের কাছে ছেলেকে নিয়ে যেতে পারবে না। নিয়ে গেলে তার নানা-নানী আবার তাকে নিয়ে আসবে। এজন্য ছেলেকেও খুন করেন রুবেল। দুজনকে গলাটিপে একাই হত্যা করে সে।
তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। রুবেল হয়তো লেম এক্সকিউজ দিয়ে তার স্ত্রীর ওপর দায়ভার চাপাতে চাচ্ছেন। সবকিছু নিয়ে তদন্ত চলছে। মেডিক্যাল রিপোর্ট পেলে খুনের আসল রহস্য জানা যাবে। এরপর মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হবে।
হাসির পরকীয়ার বিষয়ে রুবেল আদালতে যা বলেছে এ বিষয়ে হাতেম বলেন, না এটা হতে পারে না। মিথ্যা কথা বলতেছে ও (রুবেল)। বিশ্বাস করেন আমার মেয়ের মতো ভালো মেয়ে ছিল না। এলাকায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন দেখেন সবাই কি বলে। সবাই ওকে খুব ভালোবাসতো। আর এটা যদি প্রমাণ হয়, তাহলে মেয়ে হত্যার বিচারই আমি চাইবো না।
হাতেম বলেন, রুবেলের বাবা-মা হাসিকে খুন করার ইন্ধন দিয়েছে। সে ওর বাবা-মায়ের কথামতো খুন করছে। তাদেরও এ মামলায় গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। আর মামলা দ্রুত শেষ করে দোষীদের ফাঁসির দাবি জানান তিনি।
হাসি খাতুন এবং তার ছেলেকে নিরবকে খুনের ঘটনায় বাবা মো. হাতেম গত ২৪ মার্চ বনানী থানায় রুবেলকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, সাত বছর আগে হাসির সঙ্গে বিয়ে হয় রুবেলের। ৫ বছর বয়সী ছেলে নিরবকে নিয়ে রুবেল ও হাসি কড়াইল বস্তিতে বাস করতেন। ৫ মাস আগে তারা ঢাকা ছেড়ে কুমিল্লার বাড়িতে চলে যান। শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ছেলে নিরবকে নিয়ে ১৯ মার্চ ঢাকায় চলে আসেন হাসি। ২২ মার্চ রুবেলও ঢাকায় আসেন স্ত্রী ও ছেলেকে ফিরিয়ে নিতে। এ কথা শুনে হাসি ছেলেকে নিয়ে বাসা থেকে চলে যান। হাসির মা ও ভাই-বোন তাকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসেন। ২৩ মার্চ রাত ২টা পর্যন্ত হাসি ও রুবেলের মধ্যে সাংসারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া চলে। হাসির বোন বৈশাখীর সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল নিরব। ভোর ৪টার দিকে রুবেল বড় শ্যালিকা বৈশাখীকে ডেকে জানান, হাসি অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন। এরপর নিরবকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যান রুবেল। রুবেল বৈশাখীকে জানান, তিনি হাসিকে খুঁজতে যাচ্ছেন। আধা ঘণ্টা পর রুবেল বাসায় এসে বৈশাখীর কাছে ২০০ টাকা চান। নিরবকে নিয়ে কুমিল্লায় চলে যাবেন বলে জানান রুবেল। নিরব কোথায়, বেশাখী তা জানতে চাইলে রুবেল বলেন, ‘ওকে চায়ের দোকানে বসিয়ে রেখে এসেছি।’ বৈশাখীর কাছে টাকা না পেয়ে শ্যালক মেহেদীর কাছে ৫০০ টাকা নিয়ে চলে যান রুবেল।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রুবেল হাতেম এবং বৈশাখীকে ফোন দিয়ে জানতে চান, হাসিকে খুঁজে পাওয়া গেছে কি না? হাসিকে পাওয়া যায়নি বলে জানান হাতেম। তখন রুবেল তাদের বলেন, ‘বাসার পেছনে বিলের মধ্যে খোঁজ করলে হাসির লাশ পেয়ে যাবেন।’ নিরব কোথায় জানতে চাইলে রুবেল বলেন, ‘তাকেও মেরে ফেলেছি। মায়ের পাশে ওর লাশ পাবেন।’ হাসির পরিবারের লোকজন ঝিলে হাসি ও তার ছেলের লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে।