আইন ও অপরাধ

এলএসডিসহ গ্রেপ্তার ৫ জন পাঁচ দিনের রিমান্ডে

ভয়ঙ্কর মাদক লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথাইলামাইড (এলএসডি) মাদকসহ গ্রেপ্তার করা পাঁচজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (৩১ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।

রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলো—সিরাজুস সালেকীন ওরফে তপু, এসএম মনওয়ার আকিব ওরফে আনান, নাজমুস সাকিব, সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফ এবং নাজমুল ইসলাম।

এর আগে খিলগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় ওই পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট থানার উপ-পরিদর্শক বদরুল আল আমিন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনলাইন ও অফলাইনে যোগাযোগ করে এলএসডি মিশ্রিত ব্লট পেপার ও অবৈধ নেশাজাতীয় মিথাইল অ্যাম্ফাটামিনযুক্ত মাদকদ্রব্য আইস এবং গাঁজা বেচাকেনা করত। আসামিরা অন্য মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় বিভিন্ন উপায়ে দেশের বাইরে থেকে এলএসডি মিশ্রিত ব্লট পেপার, আইস এবং গাঁজা সংগ্রহ করে বিক্রি করতো। প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে মাদক ব‌্যবসায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আসামিরা সংঘবদ্ধ মাদক বিক্রেতা ও সরবরাহকারী দলের সক্রিয় সদস্য। তারা অভিনব কৌশলে দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে কৌশলে ঢাকায় এনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছিল। তারা মাদক সরবরাহ করে যুবসমাজ, বিশেষ করে ছাত্রসমাজকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা দায় স্বীকার করলেও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সুকৌশলে এড়িয়ে যায়। সময়স্বল্পতার কারণে তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেননি। আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদসহ ঢাকা মহানগরী ও ঢাকার বাইরের জেলায় অভিযান চালালে চক্রের মূল হোতাদের গ্রেপ্তার, আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই, মাদকদ্রব‌্য উদ্ধার করা যাবে।

রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মো. আশ্রাব পুলিশের চাহিদা মোতাবেক রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করেন।

আসামিদের পক্ষে মো. আবুল হোসেন, কামরুল আহমেদ কামাল প্রমুখ আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তারা বলেন, ‘আসামিদের ২৯ মে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। যা জানার বা উদ্ধার হওয়া দরকার, তা হয়েছে। আসামিরা ছাত্র, তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের রিমান্ড বাতিল করা হোক। প্রয়োজনে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপরই প্রযুক্তির সহযোগিতায় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। এলএসডি সেবনের পর হাফিজুর অস্বস্তিতে ভুগতে থাকেন। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) যাচ্ছিলেন। হাসপাতালে যাওয়ার আগে এক ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে নিজের গলায় আঘাত করেন। এতে তার মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা তিন শিক্ষার্থীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (২৯ মে) রাতে খিলগাঁওয়ে এলএসডি বিক্রির সময় মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফ, এস এম মনওয়ার আকিব ওরফে আনান, মো. নাজমুস সাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনজনের শরীর তল্লাশি করে এলএসডি ও আইস উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই রাতে ভাটারা থানাধীন বারিধারা চৌধুরী লাউঞ্জে অভিযান চালিয়ে নাজমুল ইসলাম ও বিএম সিরাজুস সালেকিন তপুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বনানী থানাধীন মহাখালী টিভি গেট এলাকায় কানিজ ফতেমা বিবির বাড়ির তৃতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ এলএসডি উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় খিলগাঁও থানার এসআই এসএম মানসুরুল করিম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা দায়ের করেন।