নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত স্বপন কুমার বিশ্বাসের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ওই আসামিকে কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১২ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে বিনা পয়সায় স্বপন কুমার বিশ্বাসের পক্ষে মামলা পরিচালনা করায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিনা ফি’তে তিনি মামলা পরিচালনা করেছেন উল্লেখ থাকবে বলে জানিয়েছে আপিল বিভাগ।
১৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা স্বপন কুমার বিশ্বাস দেশের প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তাকে ফাঁসির দণ্ড থেকে বাঁচাতে আকুতি জানিয়েছিলেন।
কনডেম সেল থেকে পাঠানো চিঠিতে স্বপন কুমার বিশ্বাস লিখেছিলেন, ‘কীভাবে বেঁচে আছি তা লিখে বোঝাতে পারব না। এটাকে ঠিক বেঁচে থাকা বা জীবন বলে না। এই জীবন আর সত্যিই আমার সহ্য হচ্ছে না। আপনি মহানুভব, তাই দয়া করে আমাকে নিজ সন্তান মনে করে আমার জীবনটা বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই। আপনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি। ভালো থাকবেন।’
এই চিঠি পাওয়ার পর স্বপন কুমার বিশ্বাসের পক্ষে বিনা ফি’তে মামলা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। প্রধান বিচারপতিকেও জানান এ সিদ্ধান্তের কথা।
২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর থানার নয়াটোল গ্রামে প্রথম স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে (৩৫) হত্যা করেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। স্বপ্নাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার ঘটনায় ঝগড়ার এক পর্যায়ে মাথায় আঘাত করে স্ত্রীকে খুন করেন স্বপন। পরে তার গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। একই বছরের ২৮ অক্টোবর সৈয়দপুর থানার এসআই শফিউল হক স্বপন কুমার বিশ্বাসের নামে মামলা করেন। ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১৩ জনের সাক্ষী গ্রহণ করে ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত স্বপনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল বিচারপতি সাহিদুল ইসলাম ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এর বিরুদ্ধে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাস আপিল করেন।