আইন ও অপরাধ

‘ভবিষ্যতে আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয়’

আবরার হত্যা মামলার ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই সব আসামিরই মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন আবরারের বাবা ও বুয়েট কর্তৃক নিযুক্ত সিনিয়র আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার।

তিনি বলেন, ‘এই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে ভবিষ্যতে আর কোনো মায়ের কোল এভাবে যেন খালি না হয়। কোনো মা-বাবাকে সন্তানের জন্য কাঁদতে না হয়।’

সোমবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে তিনি এ কথা বলেন।

রোববার (২৪ অক্টোবর) রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর আব্দুস সোবহান তরফদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে অব্যাহত রাখেন। 

সোমবার দেড় ঘণ্টায় অবশিষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করেন। সেখানে তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার, চার্জশিট এবং ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসা অভিযোগ উপস্থাপন করেন। 

আব্দুস সোবহান বলেন, ‘মামলার ২৫ জন আসামি, ২২ জন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত এবং তিন জন পলাতক রয়েছেন। আদালতে দেওয়া ৪৬ জন সাক্ষীই সব আসামিই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল বিশ্বাসযোগ্য একজন সাক্ষির ওপর নির্ভর করেও কোনো আসামিকে শাস্তি দিতে পারেন। আমরা মনে করি, ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই সব আসামিরই ট্রাইব্যুনালের কাছে মৃত্যুণ্ড দাবি করছি। যেন দৃষ্টান্তমূলক এই শাস্তি দেখে ভবিষ্যতে আর কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়। কোনো মা-বাবাকে সন্তানের জন্য কাঁদতে না হয়।’   এদিন বাদী পক্ষের এ আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন ও মুনতাসির আল জেমির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।

যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে তিনি বলেন, ‘মামলাটি ট্রাইব্যুনালে আসার আগে আসামিদের বিরুদ্ধে ক্যামেরা ট্রায়াল হয়ে গেছে। যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে ধারণা জন্মেছে যে, এরাই (২৫ আসামি) আবরারকে হত্যা করেছে। যে কারণে নিরপেক্ষতার জায়গায় ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। মামলাটি এদেশের রুগ্ন রাজনীতির একটি নিদর্শন। যে কারণে আজ দেশ সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৫ মেধাবী ছেলে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এবং একটি মেধাবী ছেলে নিহত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘‘মামলাটির সঠিক তদন্ত হলে হয়তো ২৫ ছেলের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতো না। এ মামলাটি আর ১০টি মামলার মতো নয়। এমন একটি সংবেদনশীল ঘটনার মামলায় যিনি মামলাটি তদন্ত করেছেন, তিনি কোনো তদন্তই করেননি। শুধু ২৫টি ছেলেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। 

‘আবরারের বাবা ১৯ জন আসামির নাম কোথায় পেলেন, কে তাকে বলছেন- এসব বিষয়ে তিনি কোনো তদন্ত করেননি। ট্রাইব্যুনালে দেওয়া ৪৬ জন সাক্ষি কেউ বলেননি যে, সে আবরারের বাবাকে ১৯ জন আসামির নাম বলেছিলেন। বুয়েটের ভিসি, যিনি সকল ছাত্রের অভিভাবক। তিনি এই মামলায় সাক্ষী নেই। আবরার মারা যাওয়ার পর তিনি ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটে একটি মিটিং করেছেন। এ বিষয়েও আইও কোনো তদন্ত করেননি। আমরা জেরায় সাজেশন দিয়েছি, সেই মিটিংয়ে কাকে কাকে আসামি করা হবে ঠিক করা হয়েছিল। এ যেন ছাগল দিয়ে হালচাষ করা হয়েছে।’’

এ আইনজীবী তার যুক্তিতর্ক অব্যাহত থাকাবস্থায় এদিন বিকালে ট্রাইব্যুনাল যুক্তিতর্ক মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মূলতবি করেন।

যুক্তিতর্ক উপস্থপনকালে কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানির পর তাদের আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।