আইন ও অপরাধ

মুরাদের বিরুদ্ধে থানায় ঢাবি শিক্ষার্থীর অভিযোগ

শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্যের অভিযোগে সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী জুলিয়াস সিজার তালুকদার।

শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেছেন, ‘ওই শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করেছেন। মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্রহননের অপচেষ্টা এবং ঢাবি নিয়ে একটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পুলিশ অভিযোগটি আমলে নিয়ে ইতোমধ্যে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।

ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীদের পক্ষে থানায় লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নাহিদ রেইনস নামক ফেসবুক পেজে গত ৫ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ দেখতে পাই। তাতে স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রস্রাব করার সময় আমার নাই। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, দেশের সর্বপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠকে তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেয় করেছেন।

অভিযোগ করা হয়, ঢাবির রোকেয়া এবং শামসুন্নাহার হলের নারী শিক্ষার্থীরা রাতে নিজেদের হলে অবস্থান না করে বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলে গিয়ে রাত্রিযাপন করেন। এই বাক্য দিয়ে তিনি নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্রহননের চেষ্টা করেছেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আমরা মনে করি যে কোন বিদ্যাপীঠই পবিত্র স্থান এবং একজন নাগরিকের চারিত্রিক বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে একটি সীমারেখা রক্ষা করা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। তাই উক্ত দু'টো মন্তব্যের মাধ্যমে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় বরং বিদ্যাপীঠসমূহের প্রতি তীব্র অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে মধ্যযুগীয় কায়দায় ঘৃণার রাজনীতি করার অপপ্রয়াস দেখিয়েছেন।

অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক বক্তব্য দিয়ে তাদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করে নারীর রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের বিরোধিতা প্রকাশ করেন। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নাগরিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধে বিরোধী এই ন্যক্কারজনক বক্তব্যে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে শ্লীলতাহানিসহ কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কথা বলে এবং সামাজিকভাবে মানক্ষুন্ন করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে করা এসব অপরাধ সাইবার ক্রাইমের বিশেষজ্ঞ ইউনিট তদন্ত করবে। অভিযোগ প্রমাণ হলে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হবে।

এদিন দুপুরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে বলে।

হারুন অর রশীদ বলেন, গত রাতে চিত্রনায়ক ইমন ডিবি কার্যালয়ে আসেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার মোবাইল থেকে এ অডিও ফাঁস হয়েছে কিনা- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডাকা হবে। প্রয়োজনে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকেও ডাকা হতে পারে।

সম্প্রতি দেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্প্রবর্তন ও সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেওয়ার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসেন। এরপর তার ‘নারী বিদ্বেষী’ বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও চিত্রনায়ক ইমনের সঙ্গে ফোনালাপ। ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে হোটেলে তার কক্ষে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তুলে আনারও হুমকি দেন। তার কণ্ঠে ‘অশ্লীল’ কিছু শব্দ উচ্চারিত হয়। ফোনালাপে থাকা চিত্রনায়ক ইমন ইতোমধ্যে সেটি স্বীকারও করেছেন।

৪ ডিসেম্বর ডা. মুরাদ হাসান একটি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে অপর আলোচক বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে ‘মানসিক রোগে আক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি নিজে একজন ‘চিকিৎসক হিসেবে’ পাপিয়ার ‘চিকিৎসা দরকার’ বলেও মন্তব্য করেন।

এর দুদিন আগে অনলাইনে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার পরিবারের এক নারী সদস্যকে উদ্দেশ্য করে অশালীন বক্তব্য দেন ডা. মুরাদ হাসান। এ সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়েও ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেন।

এই দুই ঘটনার পর ডা. মুরাদ হাসানের বহিষ্কার চেয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে।

উল্লেখ্য, ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় চিকিৎসক এই রাজনীতিক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।