আইন ও অপরাধ

ধর্ষণে সন্তান জন্ম: আসামির যাবজ্জীবন, শিশুর দায়িত্বে সরকার

রাজধানীর সবুজবাগ থানা এলাকায় ১১ বছরের এক কিশোরী ধর্ষণের পর সন্তান জন্ম নেওয়ার মামলায় ধর্ষক আসামি মো. রাজু আহমেদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তাকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণা শেষে আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

দণ্ডিত ঢাকার সবুজবাগ থানাধীন ৭৫, ওহাব কলোনীর এমএ কালামের ছেলে।   

এদিকে ট্রাইব্যুনালের আদেশ, ধর্ষণ থেকে জন্ম নেওয়া সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা মাধ্যমে দণ্ডিত ধর্ষকই পিতা প্রমাণিত হয়। তাই পিতার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় রায়ে ট্রাইব্যুনাল এই সন্তানকে ২১ বছর পর্যন্ত সরকারি শিশু-সোনামনি নিবাসে লেখাপড়াসহ সমস্ত প্রকার খরচ বহন করবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে এর আগে চাইলে ভিকটিম পক্ষ বা বাবার পক্ষে পারিবারিক আদালতে সন্তানকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করতে পারবেন।

এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউর মাহমুদা আক্তার এবং ভিকটিম পক্ষে আইনি সহায়তা দেওয়া নারী নির্যাতন প্রতিরোধ মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের আইন কর্মকর্তা অ্যাড. ফাহমিদা আক্তার রিংকি বলেন, মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু শিশু সন্তানটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। জন্ম নেওয়া শিশু সন্তানটি এখন সরকারি শিশু সোনামনি নিবাসে আছে। রায় অনুযায়ী ২১ বছর পর্যন্ত সরকারি খরচে সেখানে থাকবে। তার আগে পারিবারিক আদালতে আবেদনের মাধ্যমে কোনও পক্ষ নিতে চাইলে নিতে পারবে। আর এর মধ্যে না নিলে ২১ বছর পার হওয়ার পর কোনও পক্ষকে নিতে হবে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ভিকটিম বনশ্রীর ইস্টার্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো। তার মা একজন শিক্ষিকা। বাসায় মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ২০১৭ সালের ১২ মে থেকে প্রায় সময়ই ভিকটিমদের বাসায় এসে তাকে ফুঁসলিয়ে ও বিভিন্ন প্রলোভনে ধর্ষণ করতো। যা ভিকটিমের মা ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মেয়ের শারীরিক গঠন দেখে সন্দেহ হলে ইসলামী হাসপাতালে নিয়া গেলে ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানায়, ৮ মাসের গর্ভবতী। পরে মেয়েকে ঘটনা জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, রাজু প্রায়ই বাসায় এসে ধর্ষণ করেছে। ওই ঘটনায় ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভিকটিমের মা মামলা করেন। মামলার পর ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভিকটিম পুত্রসন্তান প্রসব করে। 

মামলাটি তদন্তের পর একই বছর ৭ মে আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলার বিচারকালে ট্রাইব্যুনাল চার্জশিটের ১১ জনের মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।