আইন ও অপরাধ

ট্যুরের টাকার জন্য নানাকে খুন: নাতি-নাতনির দোষ স্বীকার

রাজধানীর চকবাজারে হাজী মুনসুর আহম্মেদ নামের এক বৃদ্ধকে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার তার নাতি শাহাদাত মুবিন আলভী ও নাতনি আনিকা তাবাসসুম আদালতে দোষ স্বীকার করেন জবানবন্দি দিয়েছেন।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) এই দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করে পুলিশ। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

অন্যদিকে, এ মামলায় আনিকার বয়ফ্রেন্ড আবু সুফিয়ান রাজু, তার ভাই রায়হান ও ফুফাতো ভাই সাঈদকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে, তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি।

এদিন, আনিকা ও আলভির বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাকসুদুর রহমান ও মা আজিমপুর গার্লস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা আদালতে আসেন। অন্যদিকে, আনিকার বয়ফ্রেন্ড রাজু ও তার ভাই রায়হানের বাবাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আনিকা ও আলভীর মা বলেছেন, ‘আমি সব হারালাম। বাবাকে হারালাম। এখন আমার দুই ছেলেমেয়েকেও হারাতে বসেছি। আমরা এখন অসহায়।’

রাজুর বাবা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব আব্দুর রহমান বলেন, ‘আনিকার সঙ্গে আমার ছেলে রাজুর সপ্তম শ্রেণি থেকে সম্পর্ক। ইন্টারে পড়ার পর আমার ছেলে আর পড়ালেখা করেনি। আনিকাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে আনা-নেওয়া করত সে। তবে, আমার ছেলে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তদন্ত হলে সব জানা যাবে।’

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর বকশিবাজার, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ থেকে মুনসুর আহম্মেদের দুই নাতি ও নাতনির বয়ফ্রেন্ডসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে চকবাজার থানা পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ঘুরতে যাওয়া জন্য আসামিদের টাকার প্রয়োজন ছিল। নানার কাছে ছিল নগদ টাকা। সেই টাকা নেওয়ার জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারই দুই নাতি-নাতনি। পরিকল্পনায় যুক্ত হন নাতনির বয়ফ্রেন্ডসহ কয়েকজন। চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে টাকা-পয়সা নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা।

এ পরিকল্পনা এক মাস আগে হয় তাদের। বাসা ফাঁকা থাকার সুযোগ খুঁজছিলেন তারা। এ সুযোগটি আসে ১৭ নভেম্বর রাতে। পরিবারের সদস্যরা চাঁন কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের দাওয়াতে অংশ নিতে যান। আনিকাও সেখানে যান। কমিউনিটি সেন্টার থেকে তদারকি করেন আনিকা। বাড়ির আশপাশে থেকে আনিকার বয়ফ্রেন্ড রাজু দেখভাল করেন। ডাকাতি করতে বাসায় প্রবেশ করেন আনিকার ভাই আলভী, রাজুর ভাই রায়হান এবং সাঈদ।

এরপর তারা নানা মুনসুর আহম্মেদকে অচেতন করার জন্য ইনজেকশন দিতে গেলে তিনি বাধা দেন। তখনই তাকে মারধর করেন ডাকাতি করতে আসা তরুণরা। মারধরের একপর্যায়ে মুনসুর আহম্মেদ মারা যান। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা (তরুণরা) বাসা থেকে ৯২ হাজার টাকা নিয়ে যান।

ঘটনার পর ১৯ নভেম্বর নিহতের ছেলে আসগার আহম্মেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় দস্যুতাসহ হত্যার মামলা করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে মুনসুর আহম্মেদ হত্যায় তার পরিবারের সদস্যরা অর্থাৎ নাতি-নাতনিরা জড়িত।