আইন ও অপরাধ

টাকার জন্য নানাকে খুন: তিনজনের দোষ স্বীকার

রাজধানীর চকবাজারে হাজী মুনসুর আহম্মেদ নামের এক বৃদ্ধকে খুনের মামলায় গ্রেপ্তার তার নাতনি আনিকা তাবাসসুমের বয়ফ্রেন্ড আবু সুফিয়ান খান রাজুসহ তিন আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর দুই আসামি হলেন—রাজুর ভাই সায়ীদ রহমান রায়হান ও তাদের আত্মীয় সাঈদ হোসেন।

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) আদালতে চকবারজার থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা শওকত আকবর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করা হয়। এরপর তারা পৃথক তিন আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালতে আবু সুফিয়ান খান রাজু, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালতে সায়ীদ রহমান রায়হান এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে সাঈদ হোসেন জবানবন্দি দেন।

এর আগে ২৩ নভেম্বর এ মামলায় গ্রেপ্তার মুনসুর আহম্মেদের নাতি শাহাদাত মুবিন আলভী ও নাতনি আনিকা তাবাসসুম দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তারা কারাগারে আছেন।

পুলিশ জানায়, ঘুরতে যাওয়া জন্য আসামিদের টাকার প্রয়োজন ছিল। নানার কাছে ছিল নগদ টাকা। সেই টাকা নেওয়ার জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারই নাতি ও নাতনি। পরিকল্পনায় যুক্ত হন নাতনির বয়ফ্রেন্ডসহ কয়েকজন। চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে টাকা-পয়সা নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা।

এ পরিকল্পনা হয় এক মাস আগে। বাসা ফাঁকা থাকার সুযোগ খুঁজছিলেন তারা। এ সুযোগটি আসে ১৭ নভেম্বর রাতে। পরিবারের সদস্যরা চাঁন কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের দাওয়াতে অংশ নিতে যান। আনিকাও সেখানে যান। কমিউনিটি সেন্টার থেকে তদারকি করেন আনিকা। বাড়ির আশপাশে থেকে আনিকার বয়ফ্রেন্ড রাজু দেখভাল করেন। ডাকাতি করতে বাসায় প্রবেশ করেন আনিকার ভাই আলভী, রাজুর ভাই রায়হান এবং সাঈদ।

এরপর তারা মুনসুর আহম্মেদকে অচেতন করার জন্য ইনজেকশন দিতে গেলে তিনি বাধা দেন। তখন তাকে মারধর করেন ডাকাতি করতে আসা তরুণরা। মারধরের একপর্যায়ে মুনসুর আহম্মেদ মারা যান। এর পর ডাকাত দলের সদস্যরা (তরুণরা) বাসা থেকে ৯২ হাজার টাকা নিয়ে যান।

ঘটনার পর ১৯ নভেম্বর নিহতের ছেলে আসগার আহম্মেদ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় দস্যুতাসহ হত্যার মামলা করেন। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে—মুনসুর আহম্মেদ হত্যায় তার পরিবারের সদস্যরা অর্থাৎ নাতি-নাতনিরা জড়িত।

জানা যায়, আনিকা ও আলভির বাবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মাকসুদুর রহমান ও মা আজিমপুর গার্লস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা। অন্যদিকে, আনিকার বয়ফ্রেন্ড রাজু ও তার ভাই রায়হানের বাবা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব।