আইন ও অপরাধ

ডা. সাবিরার মৃত‌্যু: ২ বছরেও উদঘাটন হয়নি রহস্য

২০২১ সালের এই দিনে (৩০ মে) রাজধানীর কলাবাগান থেকে গ্রীন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনায় তার পরিবার কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা করে। ঘটনার দুই বছর পার হলেও উদঘাটন হয়নি ডা. সাবিরার খুনের রহস্য। জানা যায়নি ঘটনার সাথে কে বা কারা জড়িত।

এদিকে থানা পুলিশের হাত ঘুরে মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত সংস্থা বলতে পারছে না, খুনের কারণ। তবে তারা আশা করছেন অতি শিগগিরই চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করবেন।

এদিকে পিবিআই মামলার তদন্ত পাওয়ার পর গত বছর ১৯ এপ্রিল ডা. সাবিরার স্বামী এ কে এম সামছুদ্দিন আজাদকে শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ২৪ এপ্রিল তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই রয়েছে। সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারামুক্ত হয়েছেন তিনি। সর্বশেষ গত ৩ মে মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এজন্য ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত আগামী ১ জুন প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। এ নিয়ে ১৯ দফা প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে।

খুনের কারণ জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, ‘কি কারণে ডা. সাবিরা খুন হয়েছেন তার কারণ এখনো জানা যায়নি। মামলার তদন্ত চলছে। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকি করছে। তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। অনেক তথ্য পেয়েছি। আবার অনেক প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এর আগে আমরা সাবিরার ছেলে ও তার ফ্ল্যাটমেট কানিজ সুবর্ণাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছি। অস্পষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। মামলার তদন্ত চলছে।

আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে দ্রুত তদন্ত শেষ করবো। আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবো।

মামলার বাদী ডা. সাবিরার ফুফাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার বলেন, ‘দুই বছর হয়ে গেলো এখনো জানতে পেলাম না খুনের কারণ। বিচার পেলাম না। কিছু হলো না। তবে পিবিআই বসে নেই। তারা কাজ করছেন। আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছে। হয়তো আমাদের ভাগ্যটা খারাপ। এ কারণে রহস্য উদঘাটন হচ্ছে না। কত বছর পরেও অনেক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। আশা করছি, সাবিরা খুনের মামলার রহস্য উদঘাটন হবে। দোষীরা গ্রেপ্তার হবেন।

তিনি বলেন, আমরা আশায় আছি রহস্য উদঘাটনের। সাবিরার মা, ছেলে-মেয়েও বিচার চান।

সাবিরার পরিবার সম্পর্কে রেজাউল হাসান বলেন, ছেলে আহমেদ তাজওয়ার কানাডায় পড়াশোনা করছে। মাঝে মধ্যে ফোন দিয়ে মামলার আপডেট জানতে চায়। আমার ফুফু সালমা রহমানও ফোন দিয়ে বলছে, দুই বছর হতে চললো মামলার তো কিছু হলো না। সবাই আপডেট চাই। আমি কি আপডেট দিবো।

এদিকে সাবিরার মেয়ে নুসাইবা আনবার নানীর সাথে থাকছে। ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। রেজাউল হাসান বলেন, নুসাইবার সমস্ত দেখভাল করছে নানী। নানী এখন মায়ের ভূমিকা পালন করছে। যেন মেয়েটা মন খারাপ করে থাকে। মায়ের অভাব বুঝতে না পারে। এ কারণে আমার ফুফুর মেয়ে হারানোর কষ্ট কিছুটা কমেছে। নুসাইবা না থাকলে ফুফুর অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। 

২০২১ সালের ৩০ মে সকালে কলাবাগান প্রথম লেনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের শোবার ঘর থেকে চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান ওরফে লিপির রক্তাক্ত ও দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১ জুন সাবিরার ফুফাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা করেন।

জানা যায়, ডা. সাবিরা যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটিতে তিনটি কক্ষ। একটি কক্ষে সাবিরা, বাকি দুটি কক্ষে দুই তরুণী থাকতেন। সাবিরার পাশের কক্ষে থাকা কানিজ সুবর্ণা মডেলিং করেন। আরেকটি কক্ষে যে তরুণী থাকেন, তিনি ঘটনার আগেই বাড়িতে গিয়ে আর ফেরেননি। ওই তরুণী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে (বিবিএ) পড়েন। এই ২ জনকে হত্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর ডা. সাবিরার স্বামী এ কে এম সামছুদ্দিন আজাদকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।