মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাসভঙ্গ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ২৮ অক্টোবর কেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়েছিলেন, তা আদালতকে জানিয়েছেন হাসান সারওয়ার্দী।
বুধবার (১ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন মাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত শুনানি শেষে তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক জামাল উদ্দিন মীর আসামি হাসান সারওয়ার্দীকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটা দুঃখজনক। সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছেন। তিনি এবং বিএনপি নেতা ইশরাক জাহিদুল ইসলাম আরেফীকে বাইডেনের উপদেষ্টা সাজিয়ে নিয়ে তোতা পাখির মতো বক্তব্য দিয়েছেন। উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা হয়েও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করেছেন, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। তিনি বলেন, আহত এক ব্যক্তি হাসান সারওয়ার্দীকে ফোন দেন। হাসান সারওয়ার্দী তাকে দেখতে পল্টন এলাকায় যান।
এরপর চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী আদালতকে কিছু বলতে চান, জানিয়ে অনুমতি চান আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষ এর তীব্র বিরোধিতা করে। তবে, আদালত তাকে বলার অনুমতি দেন।
হাসান সারওয়ার্দী বলেন, আমি একজন বীর বিক্রম। আরও চারটি খেতাব পেয়েছি কর্মকাণ্ডের জন্য। আমি একজন যুদ্ধাহত সৈনিক। এ কারণে রাষ্ট্র আমাকে বীর বিক্রম উপাধি দিয়েছে। তিন পার্বত্য অঞ্চল, রানা প্লাজা, তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় নেতৃত্বে থেকে কাজ করেছি। কথাগুলো বলছি এ কারণে, দেশকে আমি যেমন ভালোবাসি, সবাই ভালোবাসে। এ দেশ সকলের। যদি আমার পাশের বাসায় আক্রান্ত হয়, আহত কিংবা নিহত হয়, তাদের দেখতে যাওয়া, সাহায্য করা, উদ্ধার করা, এটাই আমার প্রশিক্ষণের শিক্ষার জ্ঞানের অংশ। আমি একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল। আমার তো একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বসবাস করার কথা। এ দেশের জনগণের অর্থে এ পর্যন্ত এসেছি। তাদের টাকায় আমাদের সংসার চলে। সুতরাং এই যে মানুষের প্রতি মমত্ব, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা, এটা আমার রক্তে-মাংসে মিশে আছে।
তিনি বলেন, শুনেছি, এ মামলার প্রথম আসামিকে (জাহিদুল ইসলাম আরেফী) রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। উনারা বলেছেন, তাকে আমি সেখানে দেখি। কিন্তু, সে নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছে। সেখানে উপস্থিত থেকে কথা বলেছে। আমার দায়িত্ব ছিল আহত লোকদের দেখতে যাওয়া। বিকেল ৫টার দিকে সেখানে পৌঁছাই। ইসলামিয়া হাসপাতালে ঢুকতে চাইলে পুলিশ দেয়নি। একজন বলে, কয়েকজন আহত হয়ে সেখানে (বিএনপির অফিস) আশ্রয় নিয়েছে। কয়েকজন আহত লোককে দেখি। সেখানে কয়েকজন সাংবাদিক আসলো। ইশরাক সাহেব বললেন, আরও কয়েকজন আছে, নিচে ডেকে নিয়ে আসো। ডাকলে ওরা আসে। আমি কিন্তু সেখানে বসিনি। লাস্টে জোর করে চেয়ার দিয়ে বলে, বসেন। বসেছি, তবে কোনো বক্তব্য দেইনি। লোকটি (জাহিদুল ইসলাম আরেফী) প্রথমে সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিল। হঠাৎ ব্যাগ থেকে কাগজ বের করে—আপনারা যা যা কমপ্লেইন করেছেন। মার্কিন সরকারের পরিকল্পনা, স্যাংশন ইত্যাদি ইত্যাদি আপত্তিকর কথা বলেছে। আমি নিজে এর প্রতিবাদ করি। বলি, সে এটা বলতে পারে না। সে যে দায়িত্ব নিয়ে বলেছে। পরবর্তীতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। সে ল্যাংড়া মানুষ, হাঁটতে পারে না। অথচ, বলা হচ্ছে, আমার সাথে জগিং করে।
হাসান সারওয়ার্দী বলেন, আমি নাকি শিখিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে নিয়ে এসেছি। আমি কী করে তাকে এ দেশে আনব? সে কিন্তু উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছে, নিজের টাকায় এখানে এসেছে।
আদালত জানতে চান, ওই মোমেন্টে তাকে আটকালেন না কেন? তখন তিনি বলেন, সে কাগজ বের করে পড়া শুরু করে। অনেক সাংবাদিক সেখানে ছিল। পরিবেশটা বোঝেন। আর আমি সরকারি চাকরিজীবী না। তাকে বলেছি, যা করেছেন, অন্যায় করেছেন। আপনার অ্যাম্বাসিতে যান। যা করেছেন, সেটা নিয়ে কথা বলেন। তা না হলে বিপদ আছে।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকের দায়িত্ব ছিল আহতদের উদ্ধার করা এবং প্রতিবাদ করা। কিন্তু, বেদনাদায়ক যে, আমরা মানুষের মৃত্যুতে ব্যথিত হই না। প্রত্যেকটা জিনিসকে রাজনীতি দিয়ে বিচার করি। আমি আসলে পলিটিক্স করি না। রাজনৈতিক দলের সদস্য না, নেতাও না।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।