নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশ্যে নয়, বরং দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “নিহত সোহাগ বিগত সরকারের সময় হাজী সেলিমের ভাগ্নে পিল্লু কমিশনারের ছত্রছায়ায় পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তারের ব্যবসা করতেন। প্রায় ১৭ বছর ধরে তিনি এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পরে তিনি রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। এ সময় একই ব্যবসায় জড়িত অন্য একটি গ্রুপের সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দেয়। তারা উভয় পক্ষই পূর্বপরিচিত। এই ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।”
এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটি ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফল। সরকারকে বেকায়দায় ফেলা বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কোনো উদ্দেশ্য এখানে ছিল না।”
এর আগে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, “গত ৯ জুলাই বিকাল আনুমানিক ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে প্রকাশ্যে লাল চাঁন ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমরা এই ঘটনায় মর্মাহত এবং নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।” তিনি জানান, ঘটনার সময় ৯৯৯-এর মাধ্যমে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংবাদ পান এবং সঙ্গে সঙ্গে চকবাজার পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করেন। ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক সরোয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্তরা ‘চাঁদাবাজদের জায়গা নেই, ব্যবসায়ীদের ভয় নেই’ এমন স্লোগান দিয়ে একটি মব তৈরি করছে। এই অবস্থায় উপপরিদর্শক সরোয়ার অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান মহিনকে ঘটনাস্থল থেকে এবং রবিনকে পাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন।
পরে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার ভিত্তিতে আরো সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোট ৯ জনকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিএমপি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া ৯ আসামির মধ্যে পাথর নিক্ষেপকারীও রয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানতে গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের এজাহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, নিহতের সাবেক স্ত্রী লাকি আক্তার প্রথমে থানায় এসে একটি খসড়া এজাহার তৈরি করেন। কিছুক্ষণ পর ভুক্তভোগীর সৎ ভাই রনি থানায় এসে ওই খসড়ায় যুক্ত হন। পরে তাদের সম্মতিতে ২৩ জনকে আসামি করে খসড়া তৈরি হয়। এ সময় নিহতের বড় বোন মঞ্জু আরা বেগম থানায় এসে মূল এজাহার দায়েরের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন তার সামনে খসড়াটি উপস্থাপন করা হয়। বাদিনীর মেয়ে খসড়ার ছবি তুলে রাখলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বাদী খসড়া থেকে পাঁচজনের নাম বাদ দিয়ে নতুন একজনের নাম সংযোজন করে মোট ১৯ জনকে আসামি করে চূড়ান্ত এজাহার দাখিল করেন।”
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, যাতে এ ধরনের জঘন্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।” সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ, লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জসিম উদ্দিন এবং মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।