আইন ও অপরাধ

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তাকে বহনকারী বিমান ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন ও ৩০০ ফিট পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক আলম বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‍“আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও একটা নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেওয়া হবে।” 

জানা গেছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। একটি বৈঠকের নেতৃত্ব স্বরাষ্ট্র‌ উপদেষ্টা নিজেই দেন। ‌বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরাও উপস্থিত ছিলেন। উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তারেক রহমানের দেশে আসাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করা হয়। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী তার আগমনকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‌

বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা থাকবে। সঙ্গে থাকবে পুলিশের ‘স্পেশাল স্কট’। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশি চেকপোস্ট রাখা হবে। গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় অন্তত ‎৯টি চেকপোস্ট রয়েছে। এসব চেকপোস্টে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। তারেক রহমান দেশে ফেরায় অতিরিক্ত আরো অন্তত তিনটি চেকপোস্ট বাড়তে পারে গুলশান এলাকায়। বাসা ও তার আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন থাকবে। 

বাসভবন থেকে কোথাও যাতায়াত করলেও পুলিশি নিরাপত্তা চাইলে বাড়বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তখন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় তিন শতাধিক সদস্য নিরাপত্তায় যুক্ত থাকবেন। তার এই সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি কেন্দ্রীয়ভাবে ডিএমপির সদর দপ্তর থেকে তদারকি করা হবে। ডিএমপির গুলশান ও উত্তরা বিভাগের এলাকায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। আবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজা ও তারেক রহমানের বাসভবন পাশাপাশি হওয়ায় দুটি বাসা ও তার অফিসকে একই নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আনা হচ্ছে। 

অন্যদিকে, বাসা, অফিস এলাকা ও চলাচলপথ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা গড়ে তোলা হচ্ছে। নিরাপত্তা ঘাটতি যেন না হয় সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। যেসব রাস্তায় ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েনেরও ব্যবস্থা করা হবে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে।

বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে তারেক রহমানের নিরাপত্তায় ডিএমপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে থাকছে বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)। 

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে পুলিশের পহরা শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ, ‎সাদা পোশাকে ও পোশাকধারী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় থাকবেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং গুলশান এভিনিউর বাসভবন পর্যন্ত পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রায় কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানযাত্রী ছাড়া সহযাত্রীদের প্রবেশে নিরাপত্তাজনিত কারণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। 

গুলশান এভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাসায় উঠবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র দেয়াল ঘেঁষেই এই বাসাটি। গুলশান এভিনিউয়ের বাড়িটি তারেক রহমানের জন্য প্রায় প্রস্তুত। এ কারণে সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে তারেক রহমানের। 

নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কথা হয় উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শাহরিয়ার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর থেকে সরাসরি তদারকি করা হবে তারেক রহমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশেষ কোনো বিভাগ বা ডিভিশন এ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে না। ডিএমপি পক্ষ থেকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।”